![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220317-WA0013.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য জাল মাইন (Fack IED) পুঁতে গ্রেফতার হল তিন নকল মাওবাদী। শালবনীর রঞ্জা, জয়পুর এলাকা থেকে এই ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, স্থানীয় এই ৩ দুস্কৃতি জাল মাইন পুঁতে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারও চেয়ে বড় কথা যেটা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন তা’হল, এরা নিজেদের ‘মাওবাদী’ প্রমান করে সরকারি চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। উল্লেখ্য ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘মাওবাদী পুনর্বাসন’ প্যাকেজ অনুযায়ী আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের আর্থিক সাহায্য ও সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যা কিনা এই যুবকরা পেতে চেয়েছিল বলেই মনে করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য গত ৬ই এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল বলে পরিচিত শালবনী থানার পিড়াকাটা-গোয়ালতোড় রাজ্য সড়কের রঞ্জার জঙ্গল অধ্যুষিত একটি কার্লভাটের তলা থেকে উদ্ধার হয়েছিল মাইন সদৃশ্য একটি ধাতব বস্তু। যেহেতু এলাকাটি একদা মাওবাদী উপদ্রুত তাই ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। বোম্বস্কোয়াড (Bomb Squad) ছুটে যায় এলাকায়। বস্তুটি উদ্ধার করার পর নিষ্ক্রিয় করা হয়। স্বল্প আওয়াজও হয়। পুলিশ নমুনা সংগ্ৰহ করে তা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠায়। জানা যায় পাতি চকলেট বোমের বারুদ ঠাসা হয়েছিল ধাতব পাইপটির মধ্যে। এরপরই পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালায়। বিভিন্ন সূত্র মারফৎ নিশ্চিত হওয়ার পরই গ্রেফতার করা হয় ওই তিনজনকে।
জানা গেছে ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সুচিত্রা মাহাতর মত কট্টর মাওবাদীরা যেমন আত্মসমর্পণ করে সরকারের প্যাকেজ পেয়েছে তেমনই মাওবাদীদের সঙ্গে থাকা জনসাধারনের কমিটির লোকেরাও চাকরি পেয়েছে। মূলতঃ স্পেশাল কনস্টেবলের চাকরি পেয়েছে এরা। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে এই সংখ্যাটা প্রায় হাজার খানেক। এই নিয়ে তিনধরনের অভিযোগ কাজ করছে জঙ্গলমহলে। প্রথমত: সরকারের ওই ঘোষিত প্যাকেজের পাশাপাশি মাওবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তির পরিবারদেরও একটি প্যাকেজ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ সরকার আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসন ও চাকরি দিতে যতটা উদ্যোগী ঠিক ততটাই অনাগ্রহ মাওবাদী হামলায় নিহত বা নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন, চাকরি দিতে। কারন হিসাবে তাঁরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের আগে এই জনসাধারণের কমিটি তথা মাওবাদীদের সঙ্গে তৎকালীন বিরোধীদল তৃনমূল কংগ্রেসের গোপন আঁতাত ছিল। তাঁরা আরও বলেন, জনসাধারণের কমিটিটা আসলে মাওবাদীদের সাহায্য করার জন্য তৃণমূলেরই একটা অংশের তৈরি। অন্যদিকে মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা বেশিরভাগই সিপিএম সমর্থক। তাই তৃনমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার পুনর্বাসনে আসা মাওবাদীদেরই চাকরি দিতে বেশি আগ্রহী।
দ্বিতীয় অভিযোগটি জঙ্গলমহলের সেই অংশের যাঁরা নিজেদের সেই সময়কার মাওবাদী বলে পরিচয় দিতে আগ্রহী। এই অংশের চাকরি বা পুনর্বাসন জোটেনি। বছর খানেক আগে বিশেষ করে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এঁরা জঙ্গলে ‘আমরা মাওবাদী’ নামে মিটিং করে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, পুনর্বাসন প্যাকেজ না পেলে ফের তাঁরা নাশকতার দিনগুলিতে ফেরৎ যাবেন এবং মাওবাদী ক্রিয়াকলাপ শুরু করবেন। যদিও পুলিশের বক্তব্য কারও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নয়, পুলিশের খাতায় আগে থেকেই অভিযুক্ত মাওবাদীদের পুনর্বাসন দিচ্ছে সরকার। রঞ্জার জঙ্গলে যারা নকল মাইন পুঁতে গ্রেফতার হয়েছে তারাই এই অংশ বলে মনে করছে পুলিশ।
তৃতীয় অভিযোগটি তোলা হয়েছে স্বয়ং মাওবাদীদের কায়দাতেই সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা পোস্টার সাঁটিয়ে। অতি সম্প্রতি এই পোস্টার নজরে এসেছে ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জেলার সাবেক মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে। এই পোস্টারগুলিতে দাবি করা হয়েছে, মাওবাদী নাম করে যাঁদের স্পেশাল কনস্টেবল পদে নিয়োগ করা হচ্ছে এরা কেউ মাওবাদী নয়। এঁদের বক্তব্য মাওবাদী পুনর্বাসন প্যাকেজের নামে শাসকদল তৃনমূলের লোকেদের চাকরিতে ঢোকানো হচ্ছে। ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এই দাবিতে শাসকদলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সম্প্রতি একটি বনধ ডেকেছিল ‘মাওবাদী’রা। গত ৮ই এপ্রিলের সেই বনধ জঙ্গলমহলে সাড়াও ফেলেছিল যথেষ্ট।
এক্ষেত্রেও পুলিশ সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে, এরা আদৌ সত্যিকারের মাওবাদী কিনা। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ পোস্টার গুলি দেখে মনে হচ্ছে মাওবাদীরা চাইছে চাকরি পাক আসল মাওবাদীরাই। কিন্তু মাওবাদীরা কী চাইবে যে তাঁদের দল ছেড়ে স্কোয়াড সদস্যরা সরকারি চাকরিতে যাক। তাহলে তো মাওবাদীদের সংগঠনটাই উঠে যাবে। প্রশ্ন এখানেই যে আসলে যাঁরা প্যাকেজ পায়নি তারাই কী এটা করছে?’ যদিও পাশাপাশি পুলিশ এও বলছে যে, হতে পারে দুর্নীতির ইস্যু তুলে নতুন করে সংগঠিত হতে চাইছে। কারন এটা ঘটনা যে কোথাও কোথাও এই স্পেশাল প্যাকেজে ত্রুটি থেকে গেছে। আপাততঃ এই ৩জনকে জেরা করে সেইসব উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ।