শশাঙ্ক প্রধানঃ চপও নয়, কাশফুলের বালিশও নয় এমন কি কচুরিপানা থেকে তাঁকে থালা বানাতেও বলেননি মুখ্যমন্ত্রী! ১৫ই সেপ্টেম্বর খড়গপুর বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে তাঁর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। সেই নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার জামনার যুবক কুশল দে। ভেবেছিলেন, যাক তাঁকে আর ঘুগনি কিংবা ঝাল মুড়ি বেচতে হবেনা পুজোয়, যেমনটা মুখ্যমন্ত্রী সেদিন বাংলার বেকার যুবকদের ব্যবসায় উৎসাহিত করার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু ওই সভাতেই হাতে থাকা নিয়োগপত্র খুলেই চপ না হলেও ঢপের গল্পটা বুঝে গিয়েছিলেন কুশল। তাঁকে নিয়োগপত্র হাতে তুলে দেওয়া হয় বেলা সাড়ে তিনটার সময় আর তাঁকে কোম্পানিতে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে ওই দিনই! আর যে কোম্পানিতে তাঁর রিপোর্ট করার কথা সেই কোম্পানি খড়গপুর থেকে প্রায় ১৯০০ কিলোমিটার দূরে গুজরাটের সানন্দে অবস্থিত!
কুশল জানিয়েছেন, ” ১৫ই সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে যখন আমাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় তখন যদি খড়গপুর থেকে প্লেনেও চড়ি তাতেও কি গুজরাটের সানন্দে গিয়ে ওই কোম্পানিতে জয়েন করা সম্ভব? নিয়োগ পত্রে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে নাম্বার উল্লেখ্যের জায়গা রয়েছে ফাঁকা। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর সাত দিন কেটে গেছে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বুঝতেই পারিনি। এখন মনে হচ্ছে পুরোটাই ফেক, জালিয়াতি।” নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে কুশল। বাবা মা দাদা ও ঠাকুমা নিয়ে সংসার। বাবা এবং দাদা চাস বাস করেন। ২০১৮ সালে জামনা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ পাঠমন্দির থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ২০২০ সালে উজান স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর চন্দ্রকোনা তে সায়েন্স টেকনোলজিতে ২ বছরের ডিপ্লোমা করে সে। গত ২৩ শে আগস্ট মেদিনীপুরের রাঙামাটিতে আয়োজিত জব ফেয়ার এ যোগদিয়ে সেখানে রেশমি ও বেঙ্গল এনার্জি তে পরীক্ষায় বসেছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর যখন তাঁকে জানানো হয় যে মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে চাকরি নিয়োগপত্র দেওয়া হবে তখন তাঁর ধারনা হয় রেশমি কিংবা বেঙ্গল এনার্জিতে চাকরি হবে তাঁর কিন্তু তাঁর জন্য যে এমন নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটা তিনি ধারনাই করতে পারেননি।
আর চাকরির ধরন দেখেও বুঝতে পারা যায় যে, কেউ যদি ওই চাকরি পেয়েও যায় তাও তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কুশল জানিয়েছেন,” ভিন রাজ্য আবার গুজরাটের মত জায়গা, বেতন দেওয়া হবে মাসে ১২হাজার টাকা! দেখে শুনে মনে হচ্ছে কোনও গাড়ির শো-রুমের ওই কোম্পানি। সে না হয় করব কিন্তু গুজরাটে গিয়ে কী কারও মাসিক ১২ হাজার টাকায় পোষাবে? চাকরি দেওয়ার নাম করে এই প্রবঞ্চনা কেন? তাও আবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে! মুখ্যমন্ত্রী জানেন এসব?” অবশ্য এজিনিস নতুন তো আর নয়। খোদ নেতাজি ইনডোরের সভা থেকেই বিলি করা হয়েছিল ভুয়ো নিয়োগপত্র। যে কোম্পানির নামে সেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল সেই কোম্পানিই জানিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জাল করেছে তাদের নিয়োগপত্র। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানতেও চেয়েছিল তারা যে কিভাবে সরকারি অনুষ্ঠান থেকে সরকারি আধিকারিকরা জাল নিয়োগপত্র বিলি করে? উত্তর দেয়নি সরকার। কুশল দের তাই প্রশ্ন, “কী হচ্ছে এসব? কী চলছে চাকরি দেওয়ার নাম করে? এরপরই তো বলা হবে, “হাজার হাজার চাকরি দিয়েছে সরকার…..”