নিজস্ব সংবাদদাতা: কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কৃষিজমির ওপর দিয়ে রাস্তা করার জন্য মাটি ফেলা হয়েছিল জোর জবরদস্তি। আর সেই কারণে চাষযোগ্যতা হারিয়েছে বহু গরিব মানুষের জমি।পঞ্চায়েতের তরফে ভুল স্বীকার করে সেই মাটি সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সরানো হয়নি মাটি। বোরো চাষের মুখে নিজেদের মাটি সরাতে গেলে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্যগ্রামের গ্রামবাসীরা। ঘটনায় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর হাত-পা ভেঙেছে বলে খবর মিলেছে। শুক্রবার এই অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার বীরসিংহ গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায়। ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি গ্রাম মারিচ্যা ও জলসরার মধ্যে একটি সংযোগ রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল ওই গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা কৃষিজমির ওপর দিয়ে করার পরিকল্পনা হয়। তার জন্য মাটিও ফেলা হয় মাস দু’য়েক আগে। এই রাস্তা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন জলসরা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য ছিল এই দুই গ্রামের মধ্যে একাধিক সংযোগকারী রাস্তা রয়েছে। এরপরও যদি রাস্তা তৈরি করতে হয় তবে তা কৃষিজমি বাদ দিয়ে করা হোক। জলসরার বাসিন্দাদের দাবি, বহু ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের শেষ সম্বল পর্যন্ত চলে যাচ্ছে এই অপরিকল্পিত রাস্তার জন্য। স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলি শা বলেন, ‘আমাদের কারও ২কাটা, কারও ৫কাটা জমি। সেই জমি চলে গেলে খাবো কী? তাই বিরোধিতা করেছি রাস্তার।’
সেই সময় জলসরার বাসিন্দারা এক জোট হয়ে বিরোধিতা শুরু করে। বাধ্য হয়ে গ্রামপঞ্চয়েতের তরফে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে। প্রধান ও উপপ্রধান প্রতিশ্রুতি দেয় যে রাস্তার জন্য ফেলা মাটি সরিয়ে নিয়ে কৃষকদের জমি কৃষিযোগ্য অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যদিও গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে সেই কাজ বিভিন্ন কারনে করা হয়ে ওঠেনি। এদিকে বোরো চাষের সময় এগিয়ে আসছে দেখে জলসরা গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই মাটি সরানোর কাজ শুরু করে শুক্রবার। অভিযোগ এই সময় লাঠি বাঁশ সহযোগে কর্তব্যরত জলসরার কৃষকদের ওপর আক্রমণ চালায় মারিচ্যা গ্রামের বাসিন্দারা। সেই একতরফা আক্রমনে গুরুতর আহত হয়েছেন জলসরার একাধিক গ্রামবাসী। অন্ততঃ ৩ জনের হাত ভেঙে গিয়েছে, কয়েকজনের মাথা ফেটেছে বলে অভিযোগ।
এরপরই জলসরার বাসিন্দারা গ্রাম পঞ্চায়েত ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই জলসরা গ্রামকে ভাতে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ যেহেতু জলসরা গ্রামে তৃনমূলের আধিপত্য কম তাই রাস্তার জন্য এমন জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে তাঁদের কৃষকদেরই জমি নষ্ট হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের শান্ত করেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা। উপপ্রধান রফিক আলি খান বলেছেন, একটা সমস্যা হয়েছিল তা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই জলসরার বাসিন্দাদের জমি কৃষিযোগ্য করে দেওয়া হবে।