Saturday, July 27, 2024

Debra: ডেবরার কন্যা খুনে সপরিবার যাবজ্জীবন! বাবার শাস্তি শুনেও চোখের জলে খুশির কান্না মেয়ের

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: জন্মের পর থেকেই বাবার হাতে মাকে প্রায় প্রতিদিনই মার খেতে দেখত শিশুকন্যা। দেখত ঠাকুমার প্রতিনিয়ত গঞ্জনা, পিসি আর জেঠু জেঠিমার প্রতিনিয়ত অত্যাচার। যে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে তাঁর মাকে প্রতিনিয়ত অত্যাচার সহ্য করতে হত শিশুটি ছিল সেই কন্যা। আজ তাঁর বয়স ১৯ বছর। এখন সে নার্সিং পাঠরতা সায়নী রায়। মঙ্গলবার ঘাটাল আদালত থেকে বেরিয়ে এলেন চোখের জল মুছতে মুছতে। বিচারক তাঁর বাবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন। না, বাবার জন্য একফোঁটা অনুশোচনা নেই তাঁর চোখের জলে, ওই জল আনন্দের। ৯ বছর পরে মায়ের খুনের বিচার পেয়েছেন তিনি। বাবার সাথে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ঠাকুমা, পিসি, জেঠু এবং জেঠিমার।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

জানা গেছে ২০০০ সালে ডেবরার চককুমার গ্রামের
সুকুমার রায় তাঁর কন্যা রুমার বিয়ে দিয়েছিলেন দাসপুরের নির্মল রায়ের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই রুমার ওপর বিভিন্ন কারনে অত্যাচার চলত নানা অজুহাতে কিন্তু অত্যাচার তীব্র আকার ধারণ করে বিয়ের ৩বছরের মাথায় কন্যা জন্মের পর থেকেই। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ রুমার ওপর অত্যাচার বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত আকার ধারন করে কন্যা সায়নীর যখন বয়স ১০বছর। ২০১৩ সালের ৩০শে আগস্ট সায়নী সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে জানতে পারে তার মা খুবই অসুস্থ, তাঁকে দাসপুর গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মা নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে! খবর পেয়ে ডেবরা থেকে দাসপুর হাসপাতালে ছুটে যান সায়নীর মামাবাড়ির লোকেরা। গিয়ে দেখেন মৃত্যু হয়েছে সায়নীর মা রুমার।

মামলার সরকারি আইনজীবী শীর্ষেন্দু মাইতি জানিয়েছেন, ” রুমার বাবা সুকুমার বাবু পুলিশকে জানান তাঁর মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং সেই থেকে তাঁর সন্দেহ হচ্ছে যে তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তেও জানা যায় রুমাকে মারধর করার পর বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে রুমাকে।” পুলিশ তদন্তে নেমে শিশুকন্যা সায়নীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও জানতে পারে রুমার ওপর ধারাবাহিক অত্যাচারের কাহিনী। এরপরই গৃহবধূ নির্যাতন ও খুনের মামলা রুজু হয় রুমা রায়ের স্বামী নির্মল রায়, শাশুড়ি প্রভাবতী রায়, ননদ মলিনা সিংহ,ভাসুর প্রদ্যুৎ রায় ও প্রদ্যুৎ রায়ের স্ত্রী তপতী রায়ের বিরুদ্ধে। দাসপুর থানার পুলিশ মৃত গৃহবধূর স্বামী শাশুড়ী সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তিন মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। মামলা চলতে থাকে।

দীর্ঘ ৯ বছর পর মামলা চলার পর সোমবার ওই ৫জনকে দোষি সব্যস্ত করেন ঘাটাল মহকুমা আদালত। মঙ্গলবার ছিল সাজা ঘোষণার দিন। সেই সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক রুমা রায় কে খুন করার অপরাধে স্বামী নির্মল রায় ও ৯০ বছর বয়সী শাশুড়ি প্রভাবতী রায় সহ শ্বশুরবাড়ির মোট ৫ জন সদস্যের যাবজ্জীবন সাজা এবং দশ হাজার টাকা করে জরিমানা ঘোষণা করল ঘাটাল মহকুমা আদালত। পাশাপাশি সায়নীর জন্য ২লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাবার সাজা শুনেও কষ্ট হয়নি সায়নীর। ডেবরার মামাবাড়িতে মানুষ সায়নীর চোখে জল মায়ের খুনীরা সাজা পেয়েছে বলে।

- Advertisement -
Latest news
Related news