শশাঙ্ক প্রধান: এলাকার পরিচিত ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার অন্তর্গত বালিচক স্টেশন বাজারের ‘ উষা বস্ত্রালয়’ মালিকানাধীন সেন পরিবারের কমল সেনের মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার হয়েছে নিজের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দুরে। তারই সাথে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করেছে প্রায় সর্বাঙ্গ রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত কমল বাবুর মেয়ে দেবযানীকে।
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ দেবযানীকে ‘ বাবাকে বাঁচাও, বাবাকে বাঁচাও ‘ বলে ছুটে আসতে দেখা যায়। তাঁর চোখ মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। স্টেশন সংলগ্ন একটি পার্টি অফিসে এসে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। এরপর দেবযানী যেদিক থেকে ছুটে আসছিল সেই দিকে কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে কয়েকজন দেখতে পান রেললাইনের মধ্যে পড়ে রয়েছে কমল সেনের দেহ। রেল লাইনের বাইরের অংশে তাঁর মুন্ডু চ্যুত দেহ পড়ে রয়েছে।
স্থানীয়দের অনুমান ঘটনাটি ঘটেছে রাত পৌনে আটটা নাগাদ বলিচক স্টেশনের উত্তরপ্রান্তের শেষ বা চার নম্বর লাইনে। ঘটনাস্থল বালিচক স্টেশন থেকে ৫০০ মিটার দুরে। ওই একই দিকে অর্থাৎ রেল লাইনের উত্তর দিকেই কমলবাবুর বাড়ি আরও প্রায় ২০০ মিটার দুরে হামীরপুর এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মেয়ে দেবযানীর সঙ্গে কমলবাবুকে প্রায়ই ওই সময় সান্ধ্যভ্রমনে দেখা যেত যদিও ঘটনার সময় তাঁরা সান্ধ্যভ্রমনেই গেছিলেন কিনা জানা যায়নি। ঘটনার খবর পেয়েই রেল সুরক্ষা বাহিনী (RPF) ও রেল পুলিশ (GRP) ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মতে ঘটনাটি আত্মহত্যার কিন্তু বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরি করেছে। কমল বাবুর দেহ থেকে হাত তিনেক দুরে তাঁর জুতোর পাটি পাশাপাশি রাখা ছিল যেমনটা মানুষ জুতো খুলে রেখে যায়। কিন্তু সেই জুতোর কাছে একদলা রক্ত পাওয়া গেছে। ওই রক্ত ওখানে কী করে এল?
দেবযানীর কপালে, ডান গালে, দু হাতের কব্জি, বাম হাতের কনুই ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত হল কী করে? যদি দেবযানী কী বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন? পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান কমল বাবু ট্রেনের প্রথম দিকের বগির তলায় কাটা পড়ার পর যখন ট্রেনের পরের বগিগুলো যাচ্ছিল তখন ওই অবস্থাতেও দেবযানী কমল বাবুর দেহ বের করার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার সময় যদি মেয়ে বাবার সঙ্গে থাকে তবে ওই ভাবে গুছিয়ে জুতো খুলে কী ট্রেনের তলায় গলা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব? অথবা সেকি বাবাকে ট্রেন লাইন থেকে সরাতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়েছে? কারও কারও মতে আবার দেবযানীর আঘাত ঠিক ট্রেনের ধাক্কার নয়, অনেকটাই ধারালো অস্ত্রের আঘাতের মত।
প্রত্যক্ষদর্শী সঞ্জয় ঘোষ বলেছেন, “মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ট্রেনের ধাক্কায় নয়, ওকে কেউ ছুরি দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। আমার মনে হচ্ছে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার কারনেই ওর হাতে কনুইতে ছুরির আঘাত রয়েছে। মনে হচ্ছে কোনও দুষ্কৃতী আক্রমনের পাল্লায় পড়েছিল বাবা ও মেয়ে।” প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য ছিল মেয়ে ? বাবাকে কী কেউ ঠেলে দিয়েছিল রেল লাইনে? অথবা খুন করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল লাইনে। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে মেয়ে আহত নাকি মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে বাবা শিকার?
রেল পুলিশ জানাচ্ছে পুরো ঘটনা পরিষ্কার করে জানতে হলে কমল সেনের পরিবার ও দেবযানীর সঙ্গে কথা বলা জরুরি। উদ্ধারকারীরা দেবযানীকে প্রথমে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান কিন্তু অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাান্তরিত করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে তাঁর অবস্থা এখনো সংকট মুক্ত নয়।