নিজস্ব সংবাদদাতা : কান্ড বটে! বিবাহিত চাচাতো বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল দাদা কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল বধূটি। তাতেই ১১ মাসের ভাগ্নেকে অপরহনের ছক কষেছিল গুণধর মামা। বধূর সামান্য অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে শিশু পুত্রটিকে তাকে গামছায় বেঁধে বাইকে করে চম্পট দিয়েছিল যুবক। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি স্থান থেকে পাকড়াও হয় ওই শকুনি মামা। উদ্ধার হয় শিশু। শুক্রবার নজিরবিহীন এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চণ্ডীপুর থানা এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শেখ সিরাজুল। বছর আটাশের সিরাজুলের বাড়ি চন্ডীপুর থানার কয়লাচক গ্রামে। লাগোয়া বাড়িটিই তার চাচাতো বোনের। তাঁর বিয়ে হয়েছে একই থানার নন্দপুরে। বধূর স্বামী কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে থাকেন। ছোট শিশুটিকে নিয়ে বধূ তাঁর বাপের বাড়ি কয়লাচক গ্রামে বাবারবাড়িতে আছেন। সেখান থেকেই শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭ টা নাগাদ ১১ মাসের দুধের শিশুকে অপহরণ করে অভিযুক্ত। জানা গেছে ওই সময় শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে বাথরুমে ছিলেন মা। আর সেই সুযোগটাই নেয় অভিযুক্ত। এদিকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে শিশুটিকে দেখতে না পেয়ে চারদিক তোলপাড় করেন বধূ। পরিবারের লোকজন আশেপাশে খুঁজেও শিশুর সন্ধান না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেন।
এদিকে গামছায় বেঁধে কিছু একটা নিয়ে সিরাজুলকে এলাকা ছাড়তে দেখেন এক ব্যক্তি। সেই খবর পেতেই সন্দেহবশত: চন্ডীপুর থানায় বিষয়টি জানান শিশুর দাদু। তৎপরতার সঙ্গে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। চন্ডীপুর থানার পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয় তমলুকে, জেলা পুলিশ সদরে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের মোবাইল নম্বর চেয়ে নেয়। শুরু হয় মোবাইল ট্র্যাকিং। আশেপাশের সমস্ত থানাকে তৎপর করা হয়। মোবাইল ট্র্যাকিং করতে গিয়ে দেখা যায় ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ( 116 B National Highway) ছাড়িয়ে যুবকের অবস্থান রয়েছে ৪১ নম্বর হলদিয়া কোলাঘাট জাতীয় সড়কের (41 National Highway) শ্রীধরপুর নামক স্থানে । ফলে দুই জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলে থাকা নান্দকুমার পুলিশ অপারেশানে নামে।
জেলা পুলিশের সাথে সংযোগ রেখেই প্রতিমুহূর্তের লোকেশন ট্র্যাক করতে করতে অভিযুক্তের বাইকের পিছনে ধাওয়া করে কোলাঘাট অভিমুখে এগুতে থাকে নন্দকুমার থানার পুলিশ। আর এরই মধ্যে নিমতৌড়ির কাছে যানজটে ফেঁসে যায় ওই যুবক। তখন সকাল প্রায় সাড়ে ১০ টা। পুলিশ তৎক্ষণাৎ ধরে ফেলে যুবককে। উদ্ধার হয় গামছা বাঁধা শিশুটি। শিশু সহ অভিযুক্তকে চন্ডীপুর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি চন্ডিপুর থানায়। অভিযুক্তকে আটক করে জিজ্ঞসাবাদ করা হচ্ছে এবং উদ্ধারের পর শিশুকে পরিবারের লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্ডিপুর থানার ওসি সুকমল ঘোষ।
যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্তের প্রেমের প্রস্তাব অস্বীকার করেছিলেন বধূ। আর তাই শিশুপুত্রকে হাতিয়ে বধূকে নিজের খপ্পরে আনার পরিকল্পনা করেছিল সে। জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছে বলে পুলিশের দাবি। বধূর কাছ থেকেও পুলিশ জানতে পারে যে তার চাচাতো দাদা সিরাজুল তাকে প্রেম ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য বেশ কয়েকবার প্রস্তাব দিলেও তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তা অস্বীকার করেছিলেন।