নিজস্ব সংবাদদাতা: “আর কখনও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলবনা, তুমি ফিরে এসো বাপী।” চোখের সামনে হারিয়ে গেল বাবা! একটা মস্ত বড় ঢেউ কাটিয়ে আরেকটা ঢেউয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রতন সামন্ত। পাড়ে বসে মায়ের সাথে বাবার সেই স্নান দেখছিল ৫ বছরের মেয়েটি। একটু আগেই তিন জনই এক সাথে স্নান করছিল। হাঁফ ধরতে মা মেয়ে পাড়ে এসে বসেছিল। পাড়ে বসেই দেখছিল বাবা আর স্বামীর স্নান। বড় ঢেউটা পেরিয়ে যখন অন্য আরেকটা ঢেউ ভাঙার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রতন তখনই পাড় থেকে ফিরে এলো বড় ঢেউটার ফিরতি জল।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/IMG-20220626-WA0002.jpg)
ফিরে আসা ঢেউয়ের সাথে নতুন আসা ঢেউয়ের মিলিত ঘূর্ণিতে দিশেহারা রতন সামন্ত হারিয়ে গেলেন! আশেপাশেই ছিলেন রতন সামন্তর দাদা, অন্য বন্ধু বান্ধবরাও। কিন্তু কেউই কিছু করতে পারলেননা। হারিয়ে গেলেন রতন। পাড়ে বসে মেয়ে আর স্ত্রী বেলাভূমিতে মাথা খুঁড়ছেন আর মেয়ে বলছে, ” ফিরে এসো বাপী, প্লিজ বাপী, সত্যি বলছি বাপী আর কখনও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলবনা। এবার তো ফিরে এসো।” না, শেষ অবধি জীবন্ত ফেরা হয়নি রতন সামন্তের। দিঘা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ৪২ বছরের রতনের। রবিবার দুপুরে এমনই ঘটনার স্বাক্ষী ঘটেছে ওল্ড দিঘার জগন্নাথ ঘাটে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে দুপুর ১টার সময় যখন ঘটনাটি ঘটে তখন সমুদ্রে ভাটা চলছিল। সমুদ্র সৈকত থেকে অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছিল সমুদ্র। চর ধরে বেশ কিছুটা দূরে জলের কাছাকাছি চলে যান রতন এবং তাঁর কয়েকজন সঙ্গী। কিন্তু এক সময় স্নান করতে করতে রতন চলে যান কিছুটা দূরে। তারপরই সেই মারাত্মক ঘটনা। আচমকা বিপরীত জলস্রোত আর ধেয়ে আসা ঢেউয়ে সৃষ্টি ঘূর্ণি স্রোতে বন্দি হয়ে পড়েন তিনি। তলিয়ে যেতে থাকেন গভীরে। চোখের সামনে হাবুডুবু খেতে দেখে চিৎকার জুড়ে দেন তাঁর স্ত্রী রিঙ্কা ও মেয়ে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/IMG-20220626-WA0003-1.jpg)
দুজনে খানিকটা ওপরের দিকে ছিলেন। শুরুতেই তাঁর বন্ধু পর্যটকরা চেষ্টা চালান উদ্ধারের জন্য। কিন্তু গভীরতার কারণে পিছিয়ে আসেন তাঁরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় দিঘা থানার উদ্ধারকারী দল। জেডস্কি , স্পিডবোট নিয়ে অনেকটাই গভীরে গিয়ে তল্লাশি শুরু করেন নুলিয়া এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের জওয়ানেরা। টানা ৪০ মিনিট তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধারে ব্যর্থ হন তাঁরাও।
প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে জগন্নাথঘাটের কাছে ভেসে ওঠে রতনের নিথর দেহ। উদ্ধার করে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় দিঘা হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চোখের সামনে স্বামীকে হারিয়ে সৈকতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রতনের স্ত্রী ও কন্যা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত রতন সামন্তর বাড়ি বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার দত্তপুকুর থানার মালিকাপুরে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/IMG-20220626-WA0004.jpg)
সেখান থেকে ৫৪ জনের একটি পর্যটক দল শনিবার রাতে এসে দিঘা পৌঁছায়। ওই দলের সঙ্গেই এসেছিলেন রতনরা। তাঁর দাদার পরিবারও ছিল তাতে। বিকেলে ফেরার কথা ছিল বাড়ি। তার আগে শেষ বারের মত সমুদ্রস্নানের মজা নিতে চেয়েছিলেন রতন কিন্তু সেটাই যে শেষ স্নান হয়ে যাবে কে জানত?
পুলিশ জানিয়েছে, সমুদ্র স্নানের নিয়ম ভেঙে কোমর জলেরও গভীরে চলে যান। স্বাভাবিক ভাবেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি আর তাই এই দুর্ঘটনা। মৃতের দাদা সঞ্জয় সামন্তও বলেছেন, ‘ স্নান করতে করতে ভাই অনেকটাই গভীর চলে গিয়েছিল। তারপরই আচমকাই স্রোতে পড়ে তলিয়ে যেতে থাকে। আমরা চেষ্টা করেও ওর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। পুলিশের উদ্ধারকারী দল নেমেও উদ্ধার করতে পারেনি।’
তবে এই দুর্ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পুলিশ এবং পর্যটকদের রক্ষায় নিযুক্ত নুলিয়াদের ভূমিকা নিয়ে। সমুদ্র বিপদ থেকে পর্যটকদের রক্ষা করার বিষয়ে দিঘা পুলিশ ও নুলিয়াদের যে প্রশংসনীয় ভূমিকা বারবার দেখা গিয়েছে সেই পুলিশ এবং নুলিয়দের এদিন উপস্থিতি ছিলনা কেন ? কেন তাঁদের নজরদারি ছিলনা সমুদ্র স্নান নিয়ে এই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দা ও পর্যটকেরা। তবে কী ভাটার কারনে সমুদ্র ততটা বিপজ্জনক নয় মনে করেই ওখান থেকে সরে গিয়েছিলেন তাঁরা?