নিজস্ব সংবাদদাতা: ৩৫ টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস ২০ জন কাউন্সিলর কিন্তু তার ১৩জনই অনুপস্থিত থাকলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সাংগঠনিক কমিটির উদ্যোগে জয়ী কাউন্সিলরদের জন্য আয়োজিত সম্বর্ধনা সভায়। এক সাথে ১৩জন কাউন্সিলরের অনুপস্থিতি যে নেহাৎই কাকতালীয় নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। বিদ্রোহের আঁচ পাচ্ছেন তাঁরা আর এই বিদ্রোহ যে পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা পুর প্রশাসক প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে তাও টের পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে ওই সম্বর্ধনা সভায় মেদিনীপুর পুরসভার ৮ বিজয়ী কাউন্সিলরের উপস্থিতি জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে প্রকট করে আনল।
রবিবার মেদিনীপুর শহরে আয়োজিত ওই সম্বর্ধনা সভায় দুই শহরের মোট ৪০জন বিজয়ী কাউন্সিলরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যেখানে খড়গপুর পুরসভার অনুপস্থিত ১৩ কাউন্সিলর হলেন, বি. হরিশ কুমার, রীতা পান্ডে, ডি বাসন্তী, পি প্রভাবতী, সি এইচ বিষ্ণুপ্রসাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ গুপ্তা , তৈমুর আলি খান, জয়ন্তী সিং, কবিতা দেবনাথ, অপূর্ব ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, নমিতা চৌধুরী, রোহন দাস। এই ১৩জনের দলটির নিজেরা অথবা তাঁদের তৃণমূল নেতা স্বামীরা খড়গপুর শহরে প্রদীপ সরকার বিরোধী দল বলেই পরিচিত। অন্যদিকে ওই সভায় উপস্থিত প্রদীপ সরকার সহ আর মাত্র ৬ জন বিধায়ক হলেন, প্রবীর ঘোষ, এ পূজা, চন্দন সিং, আশা দোলাই, জয়শ্রী পাল এবং দেবাশিস সেনগুপ্ত। এঁরা প্রদীপ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
যে ১৩জন অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের নেতৃত্বে থাকা খড়গপুর তৃণমূলের বিভিন্ন নেতারা যেমন দেবাশিস চৌধুরী, অপূর্ব ঘোষ, রবিশঙ্কর পান্ডেরা খড়গপুর শহর রাজনীতিতে প্রদীপ সরকারের চেয়ে পুরানো। ২০১৫ সালে এঁদের কে পেছনে ঠেলেই প্রদীপ কে চেয়ারম্যান করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। যদিও রবিশঙ্কর তখন কংগ্রেসে ছিলেন। এখন যেহেতু তৃণমূলের প্রায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাই উড়ে এসে জুড়ে বসা প্রদীপ সরকারকে এঁরা আর মানতে রাজি নন। সেই বার্তাই তাঁরা পাঠাতে চাইলেন রাজ্য নেতৃত্বকে।
এই দলের বেশির ভাগ কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করেন প্রদীপ সরকারের দুর্নীতির কারণেই খড়গপুর তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে শহরের মানুষের কাছে। প্রদীপ বিরোধী এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, ” প্রদীপ সরকার কে দিদি যে মর্যাদা দিয়েছিলেন উনি তার সম্মান রাখতে পারেননি। রাজনীতিতে নতুন আসা প্রদীপকে শুধু চেয়ারম্যান করাই নয়, বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। দিদির মুখ চেয়েই আমরা তাঁকে জিতিয়েও আনি। কিন্তু একাধারে চেয়ারম্যান ও বিধায়ক হওয়ার পর উনি যেন ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন। সমস্ত খড়গপুর জুড়ে বলে বেড়াতে থাকেন উনই সব। উনিই উন্নয়ন! বাদ বাকি তৃণমূল নেতা কর্মীরা যেন ফ্যালনা। জবাবও পেলেন জনগনের। মাত্র দেড় বছরের মাথায় হেরে গেলেন বিধানসভায়।”
তৃণমূলের আরেক নেতা জানান, ” প্রদীপ সরকারের তাক লাগানো বাড়ি, রাতারাতি সম্পত্তির পরিমান বেড়ে যাওয়া মানুষ ভালো চোখে নেয়নি। তাই ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যখন দলের বিপুল জয় তখন খড়গপুর হারিয়েছি আমরা। ভোগ করেছেন উনি আর লজ্জ্বা পেতে হয়েছে আমাদের। এ হেন মানুষকে দল আবারও চেয়ারম্যান করুক এটা আমরা চাইনা বলেই আমরা আমাদের অবস্থান এভাবেই জানালাম। এবার দল যা ভালো বুঝবে করবে আর আমরাও সেই মত ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেব।” তাহলে যদি প্রদীপ সরকারকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদের জন্য ভোটাভুটি হয়? যদি দল প্রদীপ সরকারকে ভোট দেওয়ার জন্য হুইপ দিতে বলে? উত্তরে এক তৃণমূল নেতা বলেন, আমরা তো সেটাই বোঝাতে চেয়েছি যে আমাদের সংখ্যাটা এক-তৃতীয়াংশের অনেক বেশি। দলের হুইপ না মানলে আমাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিতেই পারে কিন্তু কোনও ভাবেই আমাদের কাউন্সিলর পদ বাতিল হবেনা। অন্য চেয়ারম্যান বেছে নিতেও আমাদের অসুবিধা হবেনা। সব মিলিয়ে প্রদীপ নেভাতে এবার মরিয়া খড়গপুরের প্রদীপ বিরোধী গোষ্ঠী।