নিজস্ব সংবাদদাতা: জোটের বাইরে গিয়ে ধরলে মাত্র ২টি আসনে জয় এসেছে বামেদের। আর কংগ্রেসের সাথে জোট ধরলে জয় এসেছে ৮ আসনে। কিন্তু তাতেও খুব একটা খেদ নেই বামেদের। কারন খড়গপুর শহরে মাত্র যে দুটি আসনে তাঁদের জয় এসেছে সেই দুটিতেই তাঁরা হারিয়েছেন বিশ্বাসঘাতকদের, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। কেন এই কথা বলছেন বামেরা? বামেদের বক্তব্য এবার তাঁরা জয় পেয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৪নম্বর ওয়ার্ড থেকে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/Screenshot_20220304-184931_Facebook.jpg)
এই দুই ওয়ার্ডের বিরোধী তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা একসময় শুধু তাঁদের ঘরেরই লোক ছিলেন তাই নয় তাঁদের হয়ে ভোটে জিতেও ছিলেন। জয়ী হওয়ার পরে লোভের বশে দল ত্যাগ করে শাসকদলে যোগ দেন। খড়গপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী জয়দীপ বসু হারিয়েছেন তৃনমূল কংগ্রেসের শ্যামল রায়কে। এই শ্যামল রায় ২০১৫ সালে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী হয়ে ১নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এখানে সিপিএমের জয়ের ব্যবধান ৬৮৪ ভোটে। জয়দীপ পেয়েছেন ২০১৮ ভোট আর শ্যামল পেয়েছেন ১৩৩৪ ভোট।
তবে জয়ের ব্যবধানে যদি ধুরমুশ করা বলা হয় তবে সেই জয় এসেছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে সিপিআই প্রার্থী নার্গিস পারভীন তাঁর নিকটতম তৃনমূল প্রার্থী মমতাজ কুদ্দুসিকে হারিয়েছেন ৫২১৭ ভোটে। খড়গপুর শহরে সেরা ব্যবধানে জয় এটাই। নার্গিস পেয়েছেন ৭৪৭৩ ভোট আর মমতাজ পেয়েছেন ২২৫৬ ভোট।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/Screenshot_20220304-133253_Facebook.jpg)
২০১৫ সালে এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন সেক হানিফ। সিপিআই প্রার্থী হিসেবে হানিফের সেই জয় ছিল পঞ্চমবারের জন্য। কিন্তু ২০১৫ সালে জেতার পর হানিফ তৃনমূলে যোগ দেন। এবং খড়গপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে যান। এবছর আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় হানিফের স্ত্রী মমতাজকে প্রার্থী করে দল। মমতাজের পরাজয়ের মধ্যে তাই হানিফেরই পরাজয় দেখছে সিপিআই।
যদিও বামেদের এই বিশ্বাসঘাতকতার তত্ত্ব মানতে রাজি হচ্ছেনা শ্যামল রায় বা হানিফের সমর্থকরা। তাঁদের মধ্যে ২০১৫ সালে সংখ্যালঘু তৃনমূলকে পৌরবোর্ড পাইয়ে দিতে তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ যে নগ্ন পুলিশি আক্রমন নামিয়ে এনেছিলেন সেই কারণে বহু বিরোধী কাউন্সিলার শাসকদলে নাম লিখিয়েছিলেন তাই তাঁদের বিশ্বাসঘাতক বলা উচিৎ হবেনা। এর পাল্টা যুক্তি দিতে গিয়ে বামেরা বলছেন, এটা ঘটনা যে মারাত্মক পুলিশি সন্ত্রাস ও মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভারতী ঘোষ বাম এবং বিজেপি কাউন্সিলরদের ওপর নগ্ন আক্রমন নামিয়ে আনেন এবং তারফলে কয়েকজন কাউন্সিলর শিবির ত্যাগ করেন কিন্তু হানিফ বা শ্যামলরা সেই তালিকায় পড়েননা। হানিফ সরাসরি ভাইস চেয়ারম্যান পদের লোভেই শাসক শিবিরে নাম লেখান আর শ্যামল যখন তৃণমূলে যোগ দেন তখন পুলিশের বা তৃনমূলের কোনও চাপ ছিলনা কারন ততদিনে বহু কংগ্রেস কাউন্সিলর নিয়ে তৃনমূল বোর্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাছাড়া দুজনেই তৃনমূল ক্যাডারে পরিণত হয়েছিলেন।
ঘটনা যাইহোক না কেন ওই দুই আসনে জয় আসায় কিছুটা হলেও খুশি বামেরা। বামেদের এবার প্রত্যাশা ছিল আরও চারটি আসন তারা পাবেন। বিশেষ করে ৩০নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র তাঁদের পরাজয় হয়েছে মাত্র ৪৩ ভোটে। এই আসনটি ছাড়াও বামেরা ১, ৯ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কিছুটা হলেও জয়ের আসা করেছিল। সেই প্রত্যাশিত জয় না এলেও আপাততঃ ২ আর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ের চর্চাতেই মশগুল খড়গপুরের বাম শিবির।