নিজস্ব সংবাদদাতা: ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের পক্ষেই ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর বিছানার ক্ষেত্রেও। যাঁরা বিছানায় বসে কিংবা শুয়ে ধূমপান করেন তাঁদের জন্য তা কত মর্মান্তিক হতে পারে তারই নিদর্শন রইল খড়গপুর শহর। সিগারেটের আগুন থেকে বিছানায় আগুন লেগে পুড়ে গিয়ে মৃত্যু হল খড়গপুর শহরে এক প্রৌঢ়ের। খড়গপুর পৌরসভার অন্তর্গত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচা এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ৯নাগাদ। প্যারেলাইজড হয়ে থাকা ওই প্রৌঢ় বাড়ির একটি অংশে একাই থাকতেন। অন্য অংশে তাঁর মেয়ে। রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মেয়ে বাবারকে খাবার দিতে এসে দেখে জ্বলন্ত বিছানায় বাবা পুড়ে পড়ে রয়েছেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর যায় পুলিশে। খড়গপুর লোকাল থানার পুলিশ এসে রাত ১০টা নাগাদ দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ততক্ষনে অবশ্য মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির।
পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম সনৎ চক্রবর্তী। এলাকায় তিনি বাদল নামেই পরিচিত ছিলেন। ৫৫ বছরের সনৎ বাবুর একটি মেয়ে। এক সময়ে আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) ক্যাম্পাসে চুক্তি ভিত্তিক কর্মী ছিলেন কিন্তু স্ত্রী মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে স্ট্রোক হয় তাঁর। তখন থেকেই প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েন। বছর দেড়েক হল ওই অবস্থাতেই ছিলেন। দেখভাল করত মেয়েই। পুলিশ জানিয়েছে, আপাততঃ জানা গেছে সনৎবাবুর নেশা ছিল ধূমপানের। সম্ভবতঃ সেখান থেকেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বেশি নড়াচড়া করতে পারতেননা বলে বিছানার মধ্যেই কৌটা আকারের কিছুতে উনি ফেলে রাখতেন শেষ হয়ে যাওয়া বিড়ি, সিগারেটের অংশ। হাতে জোর না থাকায় তা কখনও কখনও হয়ত নেভানোও হতনা। সেই রকমই কোনও পরিত্যক্ত জলন্ত বিড়ির টুকরো থেকেই প্রথমে পড়ে থাকা বিড়ি সিগারেটের বাকি অংশকে জ্বালিয়ে পুরোটা জ্বলে ওঠে। কদিন প্রচন্ড ঠান্ডা থাকায় গায়ের চাদর, সোয়েটার, লেপ তোষক মিলিয়ে দাউ দাউ করে বিছানা সহ জ্বলে উঠেছিলেন। পঙ্গু হয়ে থাকার কারনে পালানোর সুযোগ পাননি। ঠিক মত কথা বলতে না পারায় জোরালো চিৎকারও করে উঠতে পারেননি।
অন্য একটি ঘরে ছিলেন সনৎ বাবুর মেয়ে। তীব্র ঠান্ডার কারনে তিনিও নিজের ঘরে বন্দী ছিলেন। ও ঘরে কী হচ্ছে টের পাননি। এরপর বাবার জন্য রাতের খাবার দেওয়ার আগে বাবার ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকতেই ঘরময় ধোঁয়া দেখতে পেয়েই চিৎকার করে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের ডাকেন। সবাই মিলে ভেতরে ঢুকে দেখতে পান জ্বলন্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন প্রৌঢ়। এরপর খবর যায় পুলিশে। সনৎবাবুর ভাই স্থানীয় একজন রাজনৈতিক কর্মী। ছুটে আসেন তাঁর সহকর্মীরাও। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছিল। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত হবে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে।