নিজস্ব সংবাদদাতা: একেই বলে রক্তের টান। ২০০১ সালে ভাগ হয়ে গিয়েছিল মেদিনীপুর। অখন্ড মেদিনীপুর ভেঙে ২ মেদিনীপুর। নিমেষে ভাগ হয়ে যাওয়া দুটি হৃদয়, পূবে এবং পশ্চিমে। কিন্তু ভাগ হয়েও ভাগ হয়না আবেগ। থেকে যায় রক্তের টান। আর সেই টানেই জানা নেই, চেনা নেই পশ্চিমের এক গৃহবধূকে রক্ত দিতে ৭০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে ছুটে আসেন পূর্বের শিক্ষক। সোমবার তারই দৃষ্টান্ত হয়ে রইল মেদিনীপুর শহর। গরমের দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন রক্তের সংকট শুরু হয়েছে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় রক্ত ব্লাড ব্যাংকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়ছেন রোগীর পরিজনেরা। এভাবেই সমস্যায় পড়েন মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঘাটালের জাড়া এলাকার গৃহবধূ সুপর্ণা ভূঞ্যার পরিজনেরা। মুশকিল আসান হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভাস্করব্রত পতি।
জানা গেছে সূপর্ণাদেবীর এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন ছিল।ব্লাড ব্যাংকে রক্ত না পেয়ে রোগীর পরিজনেরা যোগাযোগ করেন মেদিনীপুর শহরের একটি সমাজকল্যাণ মূলক সংস্থা শালবীথির সম্পাদিকা সমাজকর্মী রীতা বেরার সাথে। করোনা কালে করোনা হাসপাতালে ভর্তি থাকা আতিমারী আক্রান্তদের খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে রোগী ও তাঁর পরিবারের কৃতজ্ঞতা অর্জন করেছে শালবীথি। সম্পাদিকা রীতা বেরা যোগাযোগ করেন মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের সদস্য সমাজকর্মী শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়ার সাথে। রীতা এবং সুদীপ মিলে ব্যক্তিগতস্তরে ডোনার খোঁজার পাশাপাশি বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।সেই পোস্ট অনেকে শেয়ার করেন। রীতার সেই পোস্ট দেখে সাড়া দেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া-১ নং ব্লকের সাহড়দা গ্রামের বাসিন্দা মেদিনীপুর কুইজ সদস্য শিক্ষক ভাস্করব্রত পতি। তিনি ফোনে কথা করেন রীতা বেরার সাথে। পাশাপাশি ফোনে যোগাযোগ হয সূদীপবাবুর সাথে।
এরপরই ভাস্কর নিজের গ্রাম সাহড়দা গ্রামের নিজের বাড়িতে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৭০ কিলোমিটার দূরের মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যার মুখেই ভাস্কর মেদিনীপুর ব্লাড ব্যাংকে পৌঁছে যান এবং রক্তদান করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী রীতা বেরা, সুদীপ কুমার খাঁড়া, রাহুল কোলেসহ রোগীর পরিজনেরা। উপস্থিত সকলকে ভাস্করবাবুকে ধন্যবাদ জানান। এদিন সুদীপের পোস্ট দেখে আরেক সমাজকর্মী রাহুল কোলে অন্য এক রক্তদাতা সুমন ঘোষকে নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক সুদীপ দাসও রক্ত দিতে হাজির হয়েছিলেন।ভাস্করবাবু রক্তদান করায় শেষমেষ শেষোক্ত দুজন রক্তদাতাকে রক্ত দিতে হয়নি। রক্তদানে ইচ্ছুক এই ৩ রক্তদাতার উদ্দেশ্যেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন রোগীর পরিবার আর মেদিনীপুর আশ্বস্ত হয়েছে এই ভেবে যে, “মেলাবেন তিনি মেলাবেন।”