নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘বিগবাজার’ বন্ধ কিন্তু খড়গপুরের সবচেয়ে বিগ বাজার পূজা মল খোলাই আছে। মাস কয়েকের মধ্যেই পুজো। টানা ২বছর দফায় দফায় বন্ধ হয়েছে শপিং মল গুলি। করোনা ও লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে আগামী পুজোর বাজারকে কেন্দ্র করে যখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে খড়গপুরের বৃহত্তম বিপণন কেন্দ্র পূজা মল তখনই বড়সড় ধাক্কার মুখে তাঁরা। কারা যেন প্রচার চালাচ্ছে বন্ধ হয়ে গেছে ওই মলটি। প্রচারের কায়দাও রীতিমত বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে সম্প্রতি একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রের ‘হাতবদল’কে হাতিয়ার করে ফলে মানুষ গিলতে শুরু করেছে সেই প্রচার আর তারই ফলে গত প্রায় ১সপ্তাহ ধরে মাছি মারছেন মলের ১৮ টি বিপণন কেন্দ্র। খড়গপুর শহরের সেই পূজা মলের ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের অসহায়তার কথা প্রকাশ করে সহযোগিতা চাইলেন খড়গপুর শহরবাসীর।
সম্প্রতি হাতবদল হয়েছে ‘বিগবাজার’ নামক কোম্পানির। ওই কোম্পানির আওতায় থাকা বিগবাজার, ফুডবাজার, প্যান্টালুনস ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলি রিলায়েন্স কোম্পানির হাতে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কিছু ব্র্যান্ডব্যান্ড বিগবাজার থেকে রিলায়েন্সের হাতে চলে গেছে আর কিছু যাওয়ার পথে। হস্তান্তর প্রক্রিয়ার এই অবস্থায় ‘বিগবাজার’ কোথাও কোথাও লেনদেন বন্ধ করেছে। যেমন খড়গপুর শহরের পূজামলে থাকা ‘বিগবাজার’ ব্যান্ডের শোরুম গুলি বন্ধ। কিন্তু পূজামলের বাকি সমস্ত দোকানই খোলা আছে। কিন্তু প্রচার চালানো হচ্ছে পূজামলই বন্ধ হয়ে গেছে। ঘটনা হচ্ছে পূজামল খড়গপুর শহরের সর্বাধিক অভিজাত মল, খড়গপুরের সবচেয়ে বিগ বাজার। খড়গপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ সেটেলমেন্ট জগন্নাথ মন্দির ঘেঁসেই পূজামলের ত্রিতল ভবন। শুরু থেকেই এই মলের মধ্যে বিগবাজার কোম্পানির একাধিক ব্যান্ডের আউটলেট থাকায় কেউ কেউ পূজামলকেই বিগবাজার বলা শুরু করেছিলেন। শহরেরও বহুমানুষের কাছে পূজামল আর বিগবাজার সমার্থক। অপপ্রচার চালাতে তাই সুবিধা হয়েছে। বিগবাজার বন্ধকে পূজামল বন্ধ বলে চালানো হচ্ছে। যেহেতু পূজামল খড়গপুর শহরের মূল বাজার গুলি থেকে একটু ভিন্ন অবস্থানে তাই অনেকেই সেদিকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই না করেই অপপ্রচার গিলছেন আর সেটাই বিপদ হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
এখানে গত ২০০৮ সাল থেকে একটি নামকরা বিপণন কেন্দ্র ভবনের তিন তলায় ব্যবসা শুরু করে। তারপরেই বাকি দুটি তলায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আসে। সবমিলিয়ে ওই বিপণন কেন্দ্র নিয়ে মোট ১৯টি শোরুম ও দোকান ছিল। কিন্তু গত সোমবার সকাল থেকে নামকরা ওই বিপণন কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কাজ হারান ওই বিপণন কেন্দ্রের ১৫০ কর্মী। আর ওই বিপণন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচারের পর খরিদ্দাররা এই মলে আসা বন্ধ করে দেয়। কারন বহু মানুষের ধারনা ওই বিপণন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে মানে গোটা ভবনটিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তব তা নয়। এই পূজা মলে ওই বিপণন কেন্দ্র ছাড়াও আরও ১৮টি শোরুম ও দোকান রয়েছে। যেগুলি বন্ধ হয় নি। চালু রয়েছে। এই বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য বাকি শোরুমের ও দোকানগুলির মালিকেরা ঠিক করেছেন প্রচারে নামবেন।
আপাতত: ঠিক হয়েছে এই মলের বাইরের দিকে একটি বা দুটি বড় আকারের ব্যানার বা হোর্ডিং লাগাবেন। এই ব্যাপারে পূজা মল শপ ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির অন্যতম সদস্য তথা এই মলের ব্যবসায়ী মনোজ প্রধান মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন ” এইভাবে চলতে থাকলে আমাদের সবকয়টি শোরুম ও দোকান বন্ধ করে দিতে হবে। কারন দিনের পর দিন তো আর লোকসান করে ব্যবসা চালানো যাবে না। আর তাই যদি হয় তাহলে দোকানগুলির কর্মচারীরা সহ এই মলের কর্মীদের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে যাবেন আরও অন্তত দুশো কর্মী। যেটা কখনই কাঙ্খিত নয়। আমরা চাইছি সাধারন মানুষের মধ্যে থেকে এই বিভ্রান্তি দূর হোক। তারজন্য আমরাও উদ্যোগ নেব। ঠিক করেছি মলের বাইরের দিকে একটি বা দুটি বড় আকারের ব্যানার বা হোর্ডিং লাগাবো।”
পাশাপাশি মনোজ জানিয়েছেন মল পরিচলনার এই সোসাইটির সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা না করে ওই বিপণন কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে ব্যবসা বন্ধ করে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গিয়েছেন। যদিও তাঁরাও এই সোসাইটির সদস্য ছিলেন। তারসাথে এই মলের কর্মীদের বেতন সহ রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ এক কোটি টাকা বকেয়া রেখে গিয়েছেন। আপাতত ওই বিপণন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে বকেয়া মিটিয়ে দিতে। যদি অনুরোধে সাড়া না দেয় তাহলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে তিনি জানালেন।
এই অপপ্রচার চালানোর পেছনে খড়গপুর শহরের কিছু শপিংমলের চক্রান্ত থাকতে পারে। পূজামলের খুব কাছাকাছি গিরিময়দান রেলস্টেশন ও বিগবাজার বাসস্টপেজ। খড়গপুর বাসস্ট্যান্ড ও খড়গপুর রেলজংশন থেকে খুবই সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার কারনে খড়গপুর শহর ছাড়াও গড়বেতা শালবনী মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম পাঁশকুড়া থেকে একটি বড় অংশের মানুষ শপিংমলের স্বাদ পেতে পূজা মলে আসেন। খড়গপুর শহরে একই ছাদের তলায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এই সমাহার অন্য কোনও শপিংমলে নেই। সেই কারণেই এই অপপ্রচার চালিয়ে পূজামলকে কোনও স্বার্থান্বেষী মহল টার্গেট করেছে বলে মনে করছেন মলের একাংশ ব্যবসায়ী মহল।