নিজস্ব সংবাদদাতা: মাওবাদীদের প্রভাব কী ফের পড়তে শুরু করেছে জঙ্গলমহলে? প্রশ্নটা তুলেই দিল ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ী। মঙ্গলবার ৫ই এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে বনধ ডেকেছিল মাওবাদীরা। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বনধ ডাকা হয়েছিল পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার ও ঝড়খন্ড ছাড়াও অসমে। সেই বনধে সাড়া দিল জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ীও। এদিন কার্যত শুনশান ছিল জঙ্গলমহলের এই ছোট জনপদটি। বাজারঘাট তো বন্ধই ছিল তার সঙ্গে বন্ধ ছিল বেলপাহাড়ীর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটিও। যদিও এই প্রথম নয়, মাস পাঁচেক আগে মাওবাদী নেতা কিষানদার গ্রেফতারের প্রতিবাদে ডাকা বনধে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জনপদের সঙ্গে সাড়া দিয়েছিল বেলপাহাড়ী। রাজনীতিবিদদের মতে বেলপাহাড়ী হল শরীরের তাপমান মাপার যন্ত্রের মতই। থার্মোমিটারে যেমন শরীরের তাপ ধরা পড়ে তেমনই জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের প্রভাব পড়ছে কিনা তা ধরা পড়ে বেলপাহাড়ীর স্পন্দনে।
জানা গেছে গত মার্চ মাসেই অসমের একটি চা বাগান এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন মাওবাদীদের অন্যতম শীর্ষ নেতা কাঞ্চনদা। এই বনধ ডাকা হয় তাঁরই গ্রেফতারের প্ৰতিবাদে। সিপিআই-মাওবাদীর পূর্বাঞ্চল রিজিওনাল ব্যুরোর তরফে একটি বিবৃতি জারি করে এই বনধ পালনের আহ্বান জানানো হয় হাওড়ার ভূমিপুত্র ‘কাঞ্চনদা’র গ্রেফতারির প্রতিবাদে। যদিও এরই পাশাপাশি কিছু স্থানীয় ইস্যুকেও জুড়ে দিয়েছিলেন মাওবাদী নেতৃত্ব যার মধ্যে অন্যতম বিষয়ছিল রাজ্য সরকারের দুর্নীতি। আর সেই দুর্নীতির মধ্যে মাওবাদীরা সামনে এনেছে মাওবাদীদের পুনর্বাসনের নামে অ-মাওবাদীদের স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরি দেওয়ার মত বিষয়টি।
গত রবিবার জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন জায়গায় ওই স্পেশাল হোমগার্ড পদে ‘সমাজবিরোধী’দের চাকরি দেওয়ার বিরুদ্ধে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার পড়তে দেখা যায়। বিনপুর থানার কাঁকো, ভাড়ারু বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি এলাকায় সাদা কাগজে লালকালিতে হাতে লেখা পোষ্টার সাঁটিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, ক্রিমিনালদের স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হল কেন? বলা হয়েছিল রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে থাকুন। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, টিএমসি নেতারা সাবধান। এরই পাশাপাশি আহবান জানানো হয় বনধকে সফল করার। পুলিশের তরফ থেকে যদিও এই পোস্টার গুলি যে মাওবাদীদেরই এমন কথা স্বীকার করা হয়নি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাওবাদীদের নাম করে কায়েমী স্বার্থে এই পোস্টার বলে দাবি করা হয়। যাইহোক তারই মধ্যেই হয়ে গেল আরও একটি বনধ। কারও কারও মতে ভয়েই বনধ। হয়ত তাই কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন, খামোকা ভয়ই বা পেতে যাবে কেন বেলপাহাড়ী? ২০১১ পর মাওবাদীদের ডাকা বেশকিছু বনধ কিন্তু নাকচ করে দিয়েছিল এই বেলপাহাড়ীই।