নিজস্ব সংবাদদাতা: দিন কুড়ি আগে মা কে হারিয়েছেন তরুণ তারই মধ্যে চলে এসেছে পরীক্ষা ফলে ঘর ছেড়ে ফিরতে হয়েছে ক্যাম্পাসে। কিন্তু মনের মধ্যে মারাত্মক অবসাদ কাজ করেছিল। সম্ভবতঃ সেই জায়গা থেকেই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur )ছাত্র যদিও সহপাঠীদের তৎপরতায় মৃত্যু হয়নি তাঁর। কিন্তু অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক বলেই জানা গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের মদন মোহন মালব্য ছাত্রাবাসে (Madan Mohan Malaviya Hall & Residence)। ওই পড়ুয়াকে বিসিরায় টেকনোলজি হাসপাতাল (Dr.B. C Roy Technology Hospital) থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তাঁর।
জানা গেছে ওই ছাত্রের নাম নরেন্দ্র সিং। বাড়ি হরিয়ানা রাজ্যে। এম টেক প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মা
মা মারা গেছেন দিন কুড়ি আগে। শ্রাদ্ধশান্তির ক্রিয়াকলাপ করে বাড়িতেই ছিলেন নরেন্দ্র। ইতিমধ্যে আইআইটির বিভিন্ন সেমিস্টারগুলির জন্য পরীক্ষার দিন ঘোষণা হয়ে যায়। আগামী ৭ই এপ্রিল থেকে সেই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। আইআইটি কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৩১শে মার্চের মধ্যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে ক্যাম্পাসে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখনও অবধি ঠিক ছিল যে অফ লাইনেই সমস্ত পরীক্ষা হবে। যে কারনে কোভিড নিষেধাজ্ঞার কারনে বাড়িতে থাকা সমস্ত পড়ুয়াকেই ক্যাম্পাসে ফিরে আসার কথা বলা হয়। যদিও পরে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় কারন ছাত্রআন্দোলননের ফলে পরবর্তীকালে স্থির হয় পড়ুয়ারা তাঁদের ইচ্ছামত অফলাইন অথবা অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারেন। যাইহোক নরেন্দ্র ক্যাম্পাসে ফিরে আসে মাত্র দিন তিনেক আগেই।
জানা গেছে আইআইটির মদন মোহন মালব্য বা ট্রিপল এম ছাত্রাবাসের আর ব্লকে অন্য দুই সহপাঠীর সঙ্গে থাকেন নরেন্দ্র। মঙ্গলবার দুপুরে লাঞ্চের সময় পের হয়ে যাচ্ছে কিন্তু নরেন্দ্র ডাইনিং হলে আসছেনা দেখে তাঁর সহপাঠীরা মোবাইলে ফোন করেন। ফোন রিং হয়ে যায়। কিছুদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগতে দেখেছেন তাঁর সহপাঠীরা। ফলে ডাইনিং হল থেকে তাঁরা দৌড়ে যান নরেন্দ্রর রুমের উদ্দেশ্যে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। বারবার ডাকাতেও সাড়া দিচ্ছিলনা সে। এরপরই এক পড়ুয়া দরজার ওপরের অংশে থাকা কাঁচের সার্সি দিয়ে উঁকি মারতেই দেখে নরেন্দ্র সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে। এরপরই পাঁচ-ছজন ছাত্র মিলে প্রবল ধাক্কায় ভেঙে ফেলেন দরজার আগল। উদ্ধার করা হয় নরেন্দ্রকে।
খবর যায় হাসপাতালে। দ্রুত ছুটে আসে আ্যম্বুলেন্স। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিসি রায় হাসপাতালে। সেখানে থেকে জীবনদায়ী আ্যম্বুলেন্স করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তাঁর।
আইআইটি খড়গপুর রেজিস্টার তমাল নাথ (Tamal Nath, Registar, IIT Kharagpur) ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘ কী কারণে ওই পড়ুয়া এমনটা করলেন তা এই মুহূর্তে জানার চেষ্টা করছিনা আমরা। আমাদের এখন একটাই উদ্দেশ্য ওই পড়ুয়া যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।’ পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিকভাবে তাঁদের মনে হয়েছে মানসিক অবসাদ থেকেই এই ঘটনা। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘ শেষ অবধি বেঁচে গেলেও মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হয়ে যায় এই ক্ষেত্রে। গলায় দড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাড়ে এবং শ্বাসনালীতে মারাত্মক জখম হতে পারে। অনেকক্ষেত্রেই মানুষ সারাজীবনের মত বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে।