নিজস্ব সংবাদদাতা : দিনের পর দিন স্বামীর বিছানাতেই প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতেন স্ত্রী। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পাননি স্বামী। যদিও সেই টের পাওয়াটাই শেষ অবধি কাল হল তাঁর। স্ত্রী ও প্রেমিক মিলে খুনই করে ফেলল সেই স্বামীকে। প্রেম ও প্রতিহিংসার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে খড়গপু্র শহর ঘেঁষা গ্রামীণ থানার অন্তর্গত পূর্ব শালিকা গ্রামে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/09/Screenshot_20220903-192450_Blur-Photo.jpg)
পুলিশ জানিয়েছে এলাকাটি খড়গপু্র ১ ব্লকের অর্জুনি গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকার। মৃতের ওই যুবকের নাম ভোলানাথ চৌধুরী। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভােলানাথের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় তাঁরই বাড়ি থেকে। পুলিশ যথারীতি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। হয়ত একটি সাধারন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হতে পারত কিন্তু খেলা ঘুরে যায় অন্য একটি ঘটনায়।
ওই দিনই অর্থাৎ শুক্রবার রাতেই মৃতের দিদি মৌ পাল খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার কলাইকুন্ডা ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মৌ জানান, তাঁর ভাইকে খুন করার পরই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন এই খুনের পেছনে তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী সাগরিকা চৌধুরী ও তাঁর প্রেমিক বি রামা রাও, তাঁর ভাইয়ের শ্যালক রাজকুমার সাউ ও শ্বাশুড়ি পূর্ণিমা সাউ যুক্ত রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/09/Screenshot_20220903-192613_Blur-Photo.jpg)
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, মৃত ভোলানাথ চৌধুরী কলাইকুন্ডা এলাকায় বস্তা তৈরীর একটি কারখানায় গাড়ি চালাতেন। তাঁর স্ত্রী সাগরিকা কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতেন। সেই কাজ ছিল চুক্তভিত্তিক। প্রায় বছর চারেক এই কাজ করছিলেন সাগরিকা। এই কাজের সুবাদে বছর তিনেক আগে পাশের গ্ৰাম কাদুয়ার এক বাসিন্দা বি রামা রাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় যা ক্রমশঃ পরিণত হয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে। বিষয়টি কানাঘুশো চলতে থাকে কিন্তু প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি ভোলানাথ। কিন্তু কিছুদিন আগের ঘটনা। সেদিন ভোলানাথ বাড়িতেই ছিলেন। স্ত্রীর মোবাইল ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখতে পান স্ত্রীর সাথে প্রেমিক বি রামা রাওয়ের শারীরিক মিলন মুহুর্তের বিভিন্ন ছবি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি, ঝগড়াঝাটি, অশান্তি । ভাইয়ের দাম্পত্য সম্পর্কের এই অবনতির কথা জানতে পেরেছিলেন দিদি মৌ ও। এরপর হঠাৎই ভাইয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় চমকে ওঠেন। তারপরই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।
মৌ পাল জানান, ওই প্রেমিকের কাছ থেকে ভাইয়ের স্ত্রী ছাড়াও তার বাপের বাড়ির লোকেরা নিশ্চই সুযোগ সুবিধা নিত কারন মাঝে মধ্যেই আমার ভাইকে মারধর করত তার স্ত্রী ও শ্যালক। ভোলানাথ সেটা আমাকে বলেও ছিল। এমন কী এই ঘটনায় ভাইয়ের শ্বাশুড়ি মদত দিত। মৌ পাল আরও বলেন, শুক্রবার সকালেই ভাইকে খুনের জানালার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপর পেছনের ছাদের দরজা দিয়ে আততায়ীরা পালায়। আর সন্ধ্যা বেলায় বিষয়টিকে আত্মহত্যা করেছে বলে চাউর করা হয়।
মৌ পালের অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ সাগরিকা ও তার প্রেমিক বি রামা রাও এবং সাগরিকার ভাই রাজকুমার সাউকে গ্রেফতার করেছে কিন্তু সাগরিকার মা পূর্ণিমা সাউ পলাতক। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার ধৃতদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আদালতে হাজির করে সাগরিকাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।