নিজস্ব সংবাদদাতা: বন্যার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যে ঘাটালের নাম সর্বত্রই সেই ঘাটালই চলে যাচ্ছিল খরার তালিকায়। বর্ষায় কার্যত নির্জলা ঘাটাল মহকুমার হাজার হাজার বিঘা কৃষিক্ষেত। মাথায় হাত কৃষকদের। তারই মধ্যে কয়েক ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে জল থইথই ঘাটাল মহকুমা বিভিন্ন এলাকা। ইতিমধ্যেই ঘাটাল পৌর এলাকার একাধিক ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরও জলমগ্ন হওয়ায় সেই জল ভেঙেই হাসপাতালে প্রবেশ করতে হচ্ছে রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের। এক জায়গায় বাঁশের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় চূড়ান্ত ভোগান্তিতে দুই পাড়ের গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে রবিবার ভোর রাত থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয় ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন অংশ জুড়ে। সঙ্গে ছিল বজ্রপাতও। সকাল ৭টা অবধি বৃষ্টির পরিমান বেশি ছিল। তারফলেই দেখা যায় ঘাটাল পৌরসভার ১৩/১৫/১৬/১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক রাস্তা বৃষ্টির জলে ডুবে রয়েছে। ঘাটাল অরবিন্দস্টেডিয়াম, বিদ্যাসাগর স্কুল মাঠ জল থৈ থৈ।ঘাটাল যদিও এর জন্য বৃষ্টি নয় পুরসভাকেই দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানিয়েছেন পৌর এলাকায় বেহাল নিকাশি নালার অভাব এবং অব্যবস্থাই ডুবিয়েছে মানুষকে। পুরবাসীর অভিযোগ দিনের পর দিন অবহেলিত হয়ে আসছে নিকাশি ব্যবস্থা। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অরূপ ঘোষ নামক এক ব্যবসায়ী জানান, বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই তো স্বাভাবিক, যেটা অস্বাভাবিক সেটা হল বর্ষাকাল আসছে জেনেও নিকাশি ব্যবস্থার কোনও সংস্কার করা হয়নি। যে কারনে দুর্দশার মধ্যে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
ওদিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছে মহকুমার শিলাবতী, কেঠে, ঝুমি প্রভৃতি নদী ও খালগুলিতে। জলস্রোত বাড়ছে। কিন্তু বহু জায়গায় সংস্কারের অভাবে নদী বক্ষে ব্যাপক কচুরিপানা জমে রয়েছে। জলের তোড়ে সেই কচুরি পানা ভেসে গিয়ে বাধা পাচ্ছে বিভিন্ন বাঁশের সাঁকোগুলিতে। ঘাটাল মনসুকা এলাকায় ঝুমি নদীর ওপর থাকা সেরকমই থাকা একটি বাঁশের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় অত্যন্তরে পড়েছেন দুই পাড়ের মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে তাঁদের।অন্যদিকে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরে জমেছে জল, জল পেরিয়ে ভোগান্তির পারাপার রোগীর আত্মীয় থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
প্রায় একই অবস্থা ঘাটাল মহকুমার অন্যান্য ব্লকগুলিতেও। চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের নম্বর ব্লকের নিচন্যা গ্রামে জল ঢুকলো বাড়ি ও দোকানে,জল থৈ থৈ খেলার মাঠ, জমি। চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কদমতলা এলাকায় জলে ডুবল দেকান রাস্তা ঘাট। তবে এরপরও খুশি ঘাটাল মহকুমার কৃষকরা। চলতি মরসুমের শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি অবধি বৃষ্টি না হওয়ায় প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন কৃষকেরা, জলের অভাবে আমন ধান চাষের কাজ আটকে ছিল। পয়সা খরচ করে বিদ্যুৎ বাহিত জল সেচের মাধ্যমে সবার পক্ষে চাষ করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু এলাকায় ডিপটিউবেল ব্যবহার করে জমিতে চাষ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ জমি অনাবাদি হয়েই পড়েছিল। ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা কোমরবেঁধে উঠে পড়ে লেগেছেন। খুশির ঝিলিক কৃষক পরিবারে।