নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর শহর কী তবে ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে? উত্তরে হ্যাঁ-ই বললেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। বললেন, অন্ততঃ মহিলাদের পক্ষে সন্ধ্যার পর এই শহর নিরাপদ নয়। সোমবার সাত সকালে খড়গপুর শহরের সুভাষপল্লী এলাকায় এক ব্যবসায়ীর হিসাবরক্ষক কর্মচারীর ৬ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের পর রাতে মালঞ্চ রোড এলাকায় ছিনতাই হয়েছিল এক গৃহবধূর ৪ ভরি সোনার হার।
পুলিশ বলেছিল দ্রুত কিনারা হয়ে যাবে ওই হার ছিনতাই রহস্যের। কিন্তু সেই রহস্যের কিনারা হওয়ার আগেই আরও দুই মহিলার হার ছিনতাই হয়ে গেল বুধবার সন্ধ্যায়, ছিনতাই হল মাত্র ১ঘন্টার ব্যবধানে। আর পুলিশ নয়, ঘটনার সময় এক ছিনতাইকারীকে ধরেও ফেলেছিলেন খড়গপুর শহরের এক সাহসিনী গৃহবধূ কিন্তু গৃহবধূর হাতে ধৃত দুস্কৃতি তাঁর সালোয়ার ছিঁড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে লজ্জা বাঁচাতে গৃহবধূ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন বলেই জানিয়েছেন।
বুধবার রাতে দুটি ঘটনাই ঘটেছে গোলবাজার থেকে বাজার করে ফেরার মুখে এবং ওই দুই মহিলার হার ছিনতাই হয়েছে গোলবাজার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যেই। এদিন প্রথম ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গোলবাজার থেকে মালঞ্চ যাওয়ার রাস্তার ওপর, সুভাষপল্লীর রাস্তায় ঢোকার মুখেই, খড়গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের কার্যালয়ের ২০০ মিটার দূরেই। একটি অটো রিকশায় করে তিন মহিলা গোলবাজার থেকে রওনা দিয়েছিলেন মালঞ্চ ও সুভাষপল্লীর উদ্দেশ্যে।
অটোর চালক জানিয়েছেন, ‘সুভাষপল্লী গেটের রাস্তায় দুই মহিলা নেমে যান। মাঝের মহিলা বসেছিলেন মালঞ্চ যাবেন বলে। যে দুই মহিলা নেমেছিলেন তাঁরা যখন আমাকে ভাড়া দিতে যাচ্ছিলেন তখনই দুই বাইক আরোহী হাজির হয়। তাদের একজন বাইক থেকে নেমে অটোতে বসে থাকা মহিলার গলার হার ছিনিয়ে নেয় অটোর পেছনে থাকা ত্রিপলের কাটা অংশের মধ্যে দিয়ে এবং পালিয়ে যায়।
অটো রিকশার চালক বলেন, “আমি ভাড়া ছেড়ে দিয়ে সেই বাইকের চালক আরোহীর পেছনে তাড়া করি। আশেপাশের লোকেরা ওই বাইকটিকে উদ্দেশ্য করে ইট ছোঁড়ে কিন্তু দুস্কৃতিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অটো চালক বলেছেন, দুস্কৃতিদের মধ্যে চালকটি হেলমেট পরে থাকলেও বাইকের পেছনে থাকা ব্যক্তির মাথায় হেলমেট ছিলনা। সেই যুবকই হার ছিনতাই করেছিল। কিন্তু জায়গাটায় আলো না থাকায় আমি ওই যুবককে ভালো করে দেখতে পাইনি।” অটো চালকের আফসোস, জায়গাটায় পর্যাপ্ত আলো থাকলে ছিনতাইকারীদের একজনকে অন্ততঃ চেনা যেত।
বুধবার দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে প্রথম ঘটনার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই। ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকার সাঁইবাবা মন্দির লাগোয়া রেল আবাসনের বাসিন্দা এক যুবতী গৃহবধূ স্কুটি চালিয়ে গোলবাজার থেকেই বাজার করে ফিরছিলেন। ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন, “আমি আমার বাড়ির স্কুটি থেকে নামতেই এক দুস্কৃতি পেছন থেকে আমার গলা থেকে হার ছিনিয়ে নেয়। মোট ২জন দুস্কৃতি ছিল। ওরা একটা পালসার বাইকে আমার পিছু নিয়েছিল। ওরা আমার গলার হার ছিনতাই করার সঙ্গে সঙ্গে আমি বাইকটা ধরে ফেলি। কিন্তু তখন একজন আমার সালোয়ারের জামাটা ধরে ছেঁড়ার চেষ্টা করে। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে আমি বাইকটা ছেড়ে দেই। ওরা পালিয়ে যায়।” ওই গৃহবধূ আফসোসের সঙ্গে জানিয়েছেন, খড়গপুর শহর মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়।
উল্লেখ্য সোমবার এবং বুধবার যে চার চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটির সঙ্গে গোলবাজারের নাম জড়িয়ে গেছে। সোমবার সকালে যে ব্যক্তির ৬লক্ষ টাকা ছিনতাই হয়েছিল তিনি গোলবাজারের ব্যবসায়িক গদিতে যাচ্ছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যায় মালঞ্চ রোডে যে মহিলার ৪ ভরি সোনার মঙ্গলসূত্র ছিনতাই হয়েছিল তিনিও গোলবাজার থেকেই ফিরছিলেন। আর বুধবার সন্ধ্যায় যে দুই মহিলার হার ছিনতাই হল তারাও গোলবাজার থেকে বাজা করেই ফিরছিলেন। সব মিলিয়ে ছিনতাইকারীরা যে গোলবাজারের ওপর নজর রাখছে সন্দেহ নেই।