শশাঙ্ক প্রধান: উৎসাহের শেষ নেই শিক্ষিকার। ছাত্র বলছে যে সে এই মাত্র করোনা টিকা নিয়েছে কিন্তু দিদিমণি মানতে নারাজ। ‘আ্যই তুই ভয়ে মিথ্যা কথা বলছিস।’ বলে হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে ফের তাকে আরেকটি টিকা দেওয়া করালেন। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার অন্তর্গর আলোককেন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। যদিও এই ঘটনার দায় ওই ছাত্র এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে তাঁদের তরফে কোনও গাফিলতি নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ যাদের টিকা দিতে বলেছে তাদেরই টিকা দেওয়া হয়েছে।
ডেবরা আলোককেন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রের নাম উমেশ পাঁড়। ১৫ বছরের এই নবম শ্রেণীর ছাত্র জানিয়েছে সোমবার বিদ্যালয়ে ১৫-১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের করোনা প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার জন্য দুটি শিবির করা হয়েছিল। তার একটিতে সে টিকা নেয়। দ্বিতীয় শিবিরে তার এক সহপাঠী ছিল। সেখানে সে গিয়েছিল সেই শিবিরে কী হচ্ছে দেখার জন্য। তখন এক শিক্ষিকা তাকে জানায় তার টিকা নেওয়া হয়েছে কিনা? ছাত্রটি হ্যাঁ বলে কিন্তু ওই দিদিমণি বলেন, ‘তুই টিকা নেওয়ার ভয়ে মিথ্যা কথা বলছিস। এরপর তাকে নিয়ে গিয়ে টিকা দেওয়া করায় স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে।’ ঘটনার পর ওই ছাত্রের বাবা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন। ওই ছাত্রকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিখিল মন্ডল বলেছেন, ‘ ঘটনাটি আচমকাই ঘটে গেছে। ওই সময় আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা ঘটনাস্থলে ছিলেননা। ওই ছাত্রটি স্কুলের অন্য একটি ক্যাম্পে গিয়েছিল। ওর হাতে কুপন ছিল স্বাস্থ্যকর্মীরা তাই দেখে ওকে টিকা দিয়ে দেন। ও নিজেও ঠিকঠাক করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বোঝাতে পারেনি। ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। ওর স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। প্যারাসিটামল, আ্যন্টাসিড ইত্যাদি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।’ অন্যদিকে ডেবরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আরিফ শাহ হোসেন জানিয়েছেন, কাকে টিকা দেওয়া হবে সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনও ভূমিকা নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ যে ছাত্র বা ছাত্রীকে পাঠাবেন তাকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দেবেন। যাইহোক আমরা ওই ছাত্রের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখছি। আপাততঃ কোনও সমস্যা নেই। একই সাথে দুটি টিকা নিয়ে অসুবিধা হয়েছে এমন নজিরও নেই।”
জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে লাঞ্চ পিরিয়ড বা দুপুরে খাবার সময়ে। তখন দুটি শিবির ছেড়েই শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকারা চলে গেছিলেন অথবা খেতে যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন। তাই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই ওই ছাত্রকে টিকা দিয়ে দেওয়ান ওই শিক্ষিকা। এটা ঘটনা যে ছাত্রটির মধ্যে একটু জড়তা আছে কিন্তু বোকা নয়। অন্যদের মত সড়গড় নয়, কথা বুঝিয়ে বলতে একটু সময় নেয়। সেই সময়টুকু তাকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, ছাত্রের হাতে কুপন ছিল যাতে বোঝা যায় যে সে টিকা নিয়ে নিয়েছে। এবং ওই কুপন ফের দ্বিতীয় টিকার জন্য দেওয়া। কিন্তু ওই শিক্ষিকা ধরেই নিয়েছিলেন যে, ছাত্রটি কুপন নিয়েছে কিন্তু টিকা নেয়নি। তৃতীয়ত অন্য যে শিবির থেকে ছাত্রটি টিকা নিয়েছিল সেখানে খোঁজ করলেই জানা যেত যে ছাত্রটি টিকা নিয়েছে কিনা। আসলে গোটা ঘটনাটাই ঘটেছে তাড়াহুড়ো করার জন্য। যা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারত।