নিজস্ব সংবাদদাতা: এক ‘গদ্দার’কে জবাব দিয়েছে বলে দাবী করেছিল খড়গপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড, পাঁচবেড়িয়া। কিন্তু ফের ‘গদ্দারে’র গন্ধ পেয়ে ফুঁসছেন সেখানকার মানুষজন। ৪নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী বাম তথা সিপিআই প্রার্থীকে পাঁচবেড়িয়া জিতিয়েছিল 5217 ভোটে। যা কিনা এই পুরসভায় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধান বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সিপিআই প্রার্থী নার্গিস পারভীন ভোটে জিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি। ভোট গণনা হয়েছিল ২রা মার্চ। তারপর লাল আবীর মেখে মিছিলও করেছেন কর্মীদের সাথে। ৭দিনের মাথায় তাঁর হঠাৎ ‘মমতাময়ী’ হয়ে ওঠায় ক্রুদ্ধ পাঁচবেড়িয়া।
সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে খড়গপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর নার্গিস পারভিন বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যা মানুষদের কথা ভাবেন, উন্নয়নের চেষ্টা করেন। আমি উন্নয়নের সঙ্গে থাকব। ওনার সঙ্গে সঙ্গ দিতে চাই।” আর সংবাদমাধ্যমে এই খবর সম্প্রচার হওয়ার পরই ক্ষেপে লাল পাঁচবেড়িয়া। রাগের কারন এটাই যে বামেদের বরাবরের জেতা এই ওয়ার্ড ৫২ বছর ধরে তাদের দখলে। সাত বছর আগে ২০১৫ সালে এই ওয়ার্ড থেকে মানুষ জিতিয়েছিল সিপিআই থেকে ৫ বারের জেতা কাউন্সিলর সেক হানিফকে। কিন্তু হানিফ জেতার পরই তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর ২০২২ সালে হানিফের স্ত্রী মমতাজ কুদ্দুসি প্রার্থী হন তৃনমূল থেকে। তাঁকে প্রায় ধুরমুস করেন ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। সিপিআই প্রার্থী নার্গিস 76% ভোট পেয়ে জয়ী হন। সেই নার্গিসই এবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
নার্গিসের এই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে শাসক দল। দল বদলালে মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবে না বলে বার্তা দিয়েছে সিপিআই। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিআইয়ের সহ সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, ”যারা খড়গপুরে দলবদল করছেন মানুষ তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে। মানুষের রায়ের বিরুদ্ধে কেউ গেলে মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবে না।” মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ”উনি আমার কাছে ইতিমধ্যে আবেদন জানিয়েছেন। দলের কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়েছি। নিশ্চয়ই দলে কাজের সুযোগ দেব। অন্তর্ঘাতের কোনও বিষয় নেই।”
অন্যদিকে পাঁচবেড়িয়ার মানুষের দাবি, এরজন্য দায়ী সিপিআইয়ের সুবিধাবাদী মনোভাবই। তাঁরা বলছেন, হানিফের গদ্দারির জবাব দিতে তৈরি ছিল পাঁচবেড়িয়া। দলের যে কোনও সৈনিককে দাঁড় করালে একই ব্যবধানে জয়ী হত। কিন্তু সিপিআই প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছিল এমন একজনকে যিনি নিজে এবং তাঁর স্বামী দু’দুবার তৃনমূল থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়। ২০০৫ সালে নার্গিস এবং ২০১০ সালে তাঁর স্বামী সাইজাদ তৃনমূলের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হবার পরই ২০১৫ সালে ওই পরিবারকে টিকিট দেয়নি তৃনমূল কংগ্রেস। এবার সিপিআই থেকে টিকিট পাওয়ার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে তাঁরা ওই দলে যোগ দেন কারন হিসাব অনুযায়ী পৌর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। গোলবাজারের বড় পেঁয়াজের মালিক ‘ব্যবসা’ বুঝল আর সিপিআই বুঝলনা! পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দাদের আশঙ্কা এবার সিপিআইটাই মুছে যাবে এই এলাকা থেকে।