নিজস্ব সংবাদদাতা: বেলা ১০টা! রাজ্য সড়ক! রাস্তা দিয়ে অবিরাম যান চলাচল, মানুষের যাতায়াত আর তারই মধ্যে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে পালালো দুষ্কৃতির দল। একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনা আর সময়জ্ঞান, ১ঘন্টা নজরদারি আর ৫ মিনিটের অপারেশন। নগদে ও গহনাগাটি মিলিয় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লুটে নিয়ে পালালো দুষ্কৃতিরা। লুটের এই রোমহর্ষক ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানা এলাকায় খড়ার-ঘাটাল রাজ্য সড়কের পাশে মারিচ্যা নামক এলাকায়।
জানা গেছে ওই মারিচ্যার বাসিন্দা সেক শামসের আলি। পরিবারের কর্তা শামসের আলি টোটো চালক। তিনি ঘাটাল শহরে সাত সকালেই চলে যান টোটো নিয়ে। সামসেরের বাড়ির অনতিদূরেই কিছুটা চাষের জমি রয়েছে যেখানে তাঁর স্ত্রী কৃষিকাজ করছিলেন। বাড়িতে ছিলেন সামসেরের মা আয়েশা বিবি। সামসেরের কন্যা তখন স্কুল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আয়েশা বিবি জানিয়েছেন, বাড়ির অদূরে রাজ্য সড়কের ওপর একটি মোটরবাইক নিয়ে তিন যুবক গল্প করছিল। বেশ কিছুক্ষণ তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকায় আয়েশা বিবি তাঁদের প্রশ্ন করেন যে ওখানে কী করছে? যুবকরা উত্তর দিয়ে তাঁরা দামোদরপুর থেকে আসছে, যাবে পাঁশকুড়া। কিন্তু তাদের কাছে হেলমেট নেই, সামনেই পুলিশ হেলমেট চেকিং করছে তাই তারা যেতে পারছেনা। পুলিশ সরে গেলে তবেই তারা যেতে পারবে। এরপর আয়েশা বিবি গৃহকাজ করতে থাকেন।
আয়েশা বিবি বলেন, কিছুক্ষন পর ওই তিন যুবক চলে যায়। একটু বাদে আবার ফিরে আসে এবং বলে পুলিশ এখনও যায়নি। যুবকরা এবার বাইকটি নিয়ে আয়েশা বিবির বাড়ির কাছাকাছি চলে আসে এবং আয়েশা বিবির সাথে গল্প জুড়ে দেয়। আয়েশা বিবি গৃহকর্ম করতে করতেই তাদের সাথে কথা বলছিল। গল্পের ছলেই তারা জেনে নেয় পরিবারের সদস্য সংখ্যা এবং তাঁদের বর্তমান অবস্থান। ইতিমধ্যে নাতনি স্কুলে যায়। আয়েশা বিবি যুবকদের সাথে কথা বলতে বলতেই ঘরে ঢুকে গিয়েছিল। পেছন পেছন ঢুকে যায় দুই যুবক। তাদের একজন আয়েশা বিবির মুখ চেপে ধরে। অন্য যুবক তাঁর হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে কাপড় দিয়ে। তারপর তাঁর বুকের কাছে পিস্তল জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে রাখে। অন্যরা আলমারি ইত্যাদি ভেঙে প্রায় ৪ ভরি সোনার গহনা, প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা,এছাড়াও কয়েক ভরি রূপো গহনা পালায়।
দুষ্কৃতিরা যাওয়ার সময় আয়েশা বিবির হাত ও মুখের বাঁধন খুলে তাঁকে বাড়ির মধ্যে শেকলবন্দি করে চম্পট দেয়। বাড়ির জানলা দিয়ে ডাকাডাকি করার পর আয়েশা বিবির পুত্রবধূ ও অন্যান্যরা মাঠ থেকে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ঘাটাল থানার পুলিশ, ইতিমধ্যে ঘাটাল থানার পুলিশ এলাকার সমস্ত সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছে। দিন দুপুরে ঘাটাল শহরে ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় পড়ে গিয়েছে চাঞ্চল্য। পুলিশের অনুমান লুট হওয়া মোট সম্পদের পরিমান ৩লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সামসের জানিয়েছে বছর দেড়েক হল সে একটি বাড়ি বানিয়েছে যার টাকা ধিরে ধিরে শোধ করছিল সে। সেই বাবদ কিছুটা নগদ টাকা জমিয়েছিল কিন্তু সেটাও নিয়ে গেছে দুষ্কৃতিরা। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে সমস্ত দিকে নজরদারি করার পর মাত্র ৫ মিনিটের অপারেশনে কেল্লাফতে করেছে দুষ্কৃতিরা।