নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৮ সালের একটি মামলায় বিজেপির এক সক্রিয় কর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের বিরূদ্ধে শাসকদলকে রাজনৈতিক ফায়দা এনে দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে তোপ দাগল বিজেপি। শুধু তাই নয় একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সদ্য চিকিৎসা করে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা হাতে পায়ে ইস্পাতের যন্ত্রাংশ লাগানো ওই বিজেপি কর্মীকে পাকাপাকি গারদের পেছনে রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তাঁকে সুস্থ বলানো হয়েছে এমনটাই অভিযোগ ওই বিজেপি কর্মীর পরিবারের। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরের এই ঘটনায় পুলিশ ও তৃনমূলকে ধিক্কার জানিয়েছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও আদালতের নির্দেশেই ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ
খড়গপুর শহরের গ্রেফতার হওয়া ওই সক্রিয় বিজেপি কর্মীর নাম চরণজিৎ সিং ওরফে নিটু। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের একান্ত অনুগ্রহ ভাজন এই বিজেপি কর্মীকে এক সময় ঘোষের ছায়াসঙ্গী হিসেবে মেদিনীপুর থেকে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল। ওই সময় দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করেছিল পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার এমনই এক মামলায় যুক্ত করা হয়েছিল চরণজিৎকে। এদিকে ৬ মাস আগে খড়গপুর শহরে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার শিকার হন চরণজিৎ। একটি চারচাকা গাড়ি ধাক্কা মারে চরণজিৎয়ের বাইককে। সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। তাঁর হাত ও পায়ের হাড় গুঁড়িয়ে যায়। আঘাত লাগে মাথাতেও। প্রায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ফেরেন ওই বিজেপি কর্মী। গত ১৫দিন আগেই তিনি চেন্নাই থেকে ফিরেছেন চিকিৎসা করিয়ে। তাঁর হাতে, পায়ে এখনও ইস্পাতের চাকা, রড ইত্যাদি লাগানো রয়েছে। তিনি সুস্থভাবে হাঁটতে পারেননা, একটি হাত এখনও কাজ করেনা। স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ নিতে হয়।
এহেন ব্যক্তিকে শুক্রবার তাঁর বাড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দনগর থেকে তুলে আনে খড়গপুর শহর পুলিশ।তারপর তাঁকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে হাজির করা হয় খড়গপুর আদালতে। চরণজিতের ভাই বলজিৎ সিং দাবি করেছেন হাসপাতালকে দিয়ে তাঁর দাদার সুস্থতার সার্টিফিকেট করিয়ে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিল পুলিশ। কিন্তু বিচারক তা নামঞ্জুর করে ১দিনের জেল হেফাজত দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তুষার মুখার্জী জানিয়েছেন, পুরভোটের দামামা বাজার আগেই তৃনমূল কংগ্রেসের হয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে পুলিশ। আর তাই শুরু হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান।
বিজেপির অভিযোগ ২নম্বর ওয়ার্ড ও সংলগ্ন এলাকায় গত পৌরসভায় জিততে পারেনি তৃনমূল কংগ্রেস। কার্যত গত পৌরসভায় সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়া বিজেপি একে একে সমস্ত বিরোধী কাউন্সিলরদের পুলিশের মামলা, পুলিশি হুমকি ও প্রচুর টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করেছিল তৃনমূল কংগ্রেস। ২নম্বর ওয়ার্ডে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বিজেপির একটি অংশের দাবি এবার ওই চরণজিৎকেই পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ হিসাবে তুলে আনছিলেন তাঁরা। তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তুষার মুখার্জী বলেছেন, গতবার বোর্ড দখলের জন্য ভোটের পরে তৃনমূল পুলিশকে কাজে লাগিয়েছিল আর এবার এখন থেকেই কাজে লাগাতে শুরু করেছে। পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সাংসদ ও বিধায়কদের মামলাগুলি পর্যালোচনা, শুনানি ইত্যাদি করার জন্য যে বিশেষ আদালত গঠিত হয়েছে সেই আদালতের পরওয়া বা ওয়ারেন্টের জেরেই এই গ্রেফতার। এখানে পুলিশ কোনও স্বতঃপ্রণোদিত গ্রেফতার করেনি।