নিজস্ব সংবাদদাতা: মাটির তলায় থরে থরে সাজানো বন্দুক আর একের পর এক ম্যাগাজিন ভর্তি কার্তুজ। যা রীতিমত চমকে দিয়েছে সাধারণ মানুষ এমনকি পুলিশকেও। কারন সাম্প্রতিক অতীতে এক সাথে এত অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের নজির নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া বন্দুকের পরিমান ৩৬টি আর তার সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০ কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। যদিও উদ্ধার হওয়া বন্দুকগুলি সবই ভেঙে চুরে একাকার। সেগুলি উদ্ধার করে গোয়ালতোড় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই বন্দুক কোথা থেকে এল তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গেছে বন্দুক গুলি পাওয়া গেছে গোয়ালতোড় থানার অধীন বারোডাঙ্গা নামক একটি গ্রামের এক জায়গায় মাটি সমতলিকরনের কাজ হচ্ছিল। জঙ্গল লাগোয়া উঁচু ঢিপি কাটছিলেন শ্রমিকরা। ওই সময় কোদালের চাপে উঠে আসে একটি পলিথিন সিটে মোড়া কিছু ভাঙাচোরা বন্দুকের অংশ। এরপরই খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে জেসিপি দিয়ে আরও খনন করে আরও ৫টি প্যাকেট তুলে আনে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে প্রথম প্যাকেটটিতে ১০টি বন্দুকের অংশ ছিল। বাকি ৫টি প্যাকেটে আরও ২৬টি বন্দুকের অংশ পাওয়া যায়। পাশাপাশি যে ৪০০ থেকে ৪৫০ কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে তা রীতিমতো ম্যাগাজিন ভর্তি ছিল, যা খোলাই হয়নি ব্যবহারের জন্য।
জায়গাটি গোয়ালতোড় থানা হলেও চন্দ্রকোনা রোড বা গড়বেতা ৩ ব্লকের অধীন। চন্দ্রকোনা থেকে ৭কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত নলবোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। জঙ্গল মহলে সেই সময় মাওবাদীদের আনাগোনা এবং ঘাঁটি গেড়ে বসা। তারই পাশাপাশি মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সমরে নেমেছিল সিপিএমের প্রশিক্ষিত বাহিনী। স্থানীয় ভাবে যারা হার্মাদ নামে পরিচিত ছিল। সিপিএমের অভিযোগ ছিল স্থানীয় তৃনমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাত করেই জঙ্গলের দখল নিয়েছিল মাওবাদীরা।
বন্দুক উদ্ধারকে ঘিরে তাই তরজাও শুরু হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাত বলেছেন, আমার যতদূর মনে হচ্ছে এই বন্দুক সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর। এই এলাকায় মাওবাদীদের ততটা উপদ্রব ছিল বলে মনে হয়না। তবে মাওবাদীদেরও হতে পারে। তবে পুলিশই তদন্ত করে দেখুক এগুলি হার্মাদ নাকি মাওবাদীদের।
এই প্রসঙ্গে সিপিএমের কটাক্ষ, ‘মন্ত্রী বলতেই পারেন কারন জঙ্গলমহল জানে মন্ত্রীর সঙ্গে মাওবাদীদের পুরানো প্রেমের কথা। ২০১১ সালের আগে জঙ্গলে মাওবাদীরা নির্বিচারে সিপিএম নেতা কর্মীদের খুন করেছে আর ২০১১সালের পরে সেই কাজটা করেছে তৃনমূল। বন্দুকের রাজনীতি ওরাই করেছেন, আমরা নই।’ স্থানীয় সিপিএম নেতা সনৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘সিপিএম কোনও দিন অস্ত্রের রাজনীতি করেনি। এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমের কোনও যোগ নেই। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দেখুক।’ অন্য দিকে বিজেপির বক্তব্য, জঙ্গলমহলে মাওবাদী, তৃনমূল, সিপিএম সবার হাতেই বন্দুক ছিল। এলাকার বিজেপি নেতা, গৌতম কৌড়ি বলেন, মাওবাদীদের বন্দুক না সিপিএমের বন্দুক, না তৃণমূলের বন্দুক তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’