নিজস্ব সংবাদদাতা: মহিলাদের গহনা আদায়ের অদ্ভুত কৌশল ফাঁস করল পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট সহ আশেপাশের হাওড়া, দক্ষিণ ২৪পরগনার বহু মহিলাই সর্বশান্ত হয়েছেন এই জালিয়াতদের পাল্লায় পড়ে। সম্প্রতি সেই কোলাঘাটে প্রতারণা চক্রের হদিশ পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। পুলিশের কব্জায় ওই প্রতারনার চক্রের ২সদস্য । তবে আরও কয়েকজন পালাতে সক্ষম হয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ। রবিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কোলাঘাট এলাকার হলদিয়া মোড়ে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মিলেছে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ছুরি, লোহার রড। উদ্ধার হয়েছে মোবাইল সহ লক্ষাধিক টাকা। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতরা হল রাজা হালদার ও লাল্টু হালদার। দক্ষিণ ২৪পরগণার বারুইপুর ও কুলপি থানার বাসিন্দা রাজা ও লাল্টু।
পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্টের বাইরে কিংবা বাজার থেকে সামান্য দুরে ‘শিকারের জন্য ফাঁদ পাতত এই জালিয়াতের দল। আগে ভাগেই ‘শিকার’কে চিহ্নিত করা হত। শিকার হতেন পুলিশের সোনার গহনা পরা কোনও মহিলা। নিতান্তই পথচারীর বেশে এক প্রতারক ওই মহিলাকে ২হাজার কিংবা ৫০০ টাকার একটা বা একাধিক মোটা বান্ডিল দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করত, ওই মহিলার টাকা খোয়া গিয়েছে কিনা? মহিলা না বলত। তখন ওই প্রতারক টাকার আসল মালিকের খোঁজে সেখান থেকে সরে যেত। ঠিক তারপরই হাজির হত আরেক প্রতারক। সে মহিলাকে বলত, তার ১লক্ষ কিংবা ২লক্ষ টাকার বান্ডিল পড়ে গিয়েছে। মহিলা তা দেখেছে কী? মহিলা বলতেন, ওই দিকে একটা মানুষ চলে গেছে যে কিনা কুড়িয়ে পাওয়া টাকার মালিকের সন্ধান করছে। লোকটি সেদিকেই চলে যেত। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসত প্রথম লোকটি। সে মহিলাকে বলত, টাকার মালিকের সন্ধান পায়নি সে। মহিলা যদি বলত একটা লোক এসেছিল টাকার খোঁজে। তখন লোকটি বলত, ওহ! ওই লোকটা তো বাসে উঠে কিংবা টোটো করে চলে গেল দেখলাম। অর্থাৎ মহিলা নিশ্চিত হয়ে যেত ২লক্ষ টাকা হারানো মানুষটা এখান থেকে চলে গেছে। এবার শুরু হত দ্বিতীয় খেলা।
প্রথমজন মহিলাকে বলত, এতগুলো টাকা সে কুড়িয়ে পেয়েছে তার অর্ধেক মহিলারও প্রাপ্য। এবার শুরু হত মহিলার সমস্যা। ৫০ হাজার কিংবা ১লাখ টাকার লোভ সামলাতে না পেরে মহিলা রাজি হয়ে যেত। লোকটি টাকা বের করে তা ভাগ করতে গিয়েও থমকে যেত এবং বলত, এই প্রকাশ্যে টাকা ভাগ করে তা গুনতে সময় লাগবে। তারচেয়ে পুরো বান্ডিলটাই মহিলা বরং নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিক। বিনিময়ে তাকে হাজার পাঁচেক কিংবা হাজার দশেক টাকা দিলেই চলবে। মহিলা বলতেন অত টাকা তার কাছে নেই। লোকটি তখন বলত, আপনার কানের দুল কিংবা গলার হার, আংটি ইত্যাদি দিলেই হবে। দু’ পাঁচ হাজারের বিনিময়ে ১লক্ষ, ২লক্ষ কে না পেতে চায়? মহিলা নির্দ্বিধায় গহনা খুলে দিয়ে মোটা টাকার বান্ডিলটি ব্যাগে ঢুকিয়ে লাফাতে লাফাতে বাড়ি চলে যেতেন। আর বাড়িতে গিয়ে খুলে দেখতেন, বান্ডিলের ওপরে আর নিচে ঝকঝকে নতুন টাকা আর ভেতরে টাকার মাপে কাটা সাদা কাগজ মাত্র! এরপর কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকতনা।
এ ভাবেই একাধিক মহিলাকে ঠকানোর অভিযোগ পেয়ে পথে নামে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় কোলাঘাটের হলদিয়া মোড়ে প্রতারণার জাল বিছিয়ে শিকারের অপেক্ষা করছে জালিয়াতরা, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। তাদের দেখে চম্পট দেয় ৬ জন। ধরা পড়ে যায় ২ জন। তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সাকিব আহমেদ বলেন, পূর্ব মেদিনীপুর সহ কলকাতা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জুড়ে এই প্রতারণা চক্রের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। সে কারণে ধৃতদের জেরা করে রাজ্য জাল ছড়ানো এই প্রতারণা চক্রের অধরা মাথাদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। আপাততঃ ধৃতদের ১২দিনের নিজস্ব হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। কোথায় কোথায় এই জালিয়াতি হয়েছে তার তত্ত্বতল্লাশি চলছে।