নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র মাস খানেকের ব্যবধানে দুই পর্যটকের কাঁকড়া খেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় নড়ে চড়ে বসল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। অভিযান চালানো হল সৈকত শহরের কয়েকটি হোটেল, রেস্টুরেন্টে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল সৈকত শহরের হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবার কতটা নিরাপদ?
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211229-WA0023.jpg)
পর্যটকদের একাংশের দাবি ছিল ওই সব হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবারের মান খতিয়ে দেখুক স্বাস্থ্য দপ্তর। যদিও ওই দুই তরুণ তরুণীর কাঁকড়াতে অ্যালার্জি ছিল বলে জানা গিয়েছে তবুও নিজেদের তরফ থেকে কোনও খামতি রাখতে নারাজ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আওতাধীন নন্দীগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর। আর সেটা করতে গিয়েও দেখা গেল রঙ করা ফ্রোজেন মাংস, মাছ, কাঁকড়া বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। এমনকি বাসী পাঁউরুটিও।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211229-WA0020.jpg)
বুধবার স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই আধিকারিক নিউ এবং ওল্ড দিঘার ১২টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের দুই আধিকারিক রণিতা সরকার ও সাকির হোসেন। নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বিধি মেনে রেস্তরাঁ গুলি চলছে কি না, তা দেখা হয়। পাশাপাশি রান্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, তেল, মশলা ইত্যাদির প্যাকেট, মেয়াদ উর্ত্তীনের তারিখ ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হয়েছে। ফ্রিজ খুলে দেখা হয়েছে ভেতরে রান্না করা বাসী খাবার, মাছ, মাংস ইত্যাদি কতদিন ধরে মজুদ করা হয়েছে। জানা গেছে এদিন রান্না করা খাবার ও রান্নার প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ওই আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ‘ প্রাথমিকভাবে কিছু বেনিয়ম তো নজরে এসেছে। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়ার ভাজা, ফ্রোজেন মাংস রং মাখিয়ে বিক্রি করতে দেখলাম। মনে হল বাসি। পাউরুটিও বাসি বিক্রি হচ্ছিল। সেগুলি ফেলে নষ্ট করার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ওই কাঁকড়া এবং মাংসের নমুনাও সংগ্ৰহ করা হয়েছে। সেগুলি কলকাতার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে পাঠানো হবে। রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’ জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, মাঝে মধ্যেই এই চকিত অভিযান চালানো হবে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘শুধুই হোটেল বা রেস্তোরাঁয় নয়। আমরা খতিয়ে দেখব বাজার, ফুটপাত, সৈকতে যে সমস্ত অস্থায়ী দোকান থেকে খাবার বিক্রি করা হয় সেখানেও। খাবার বিক্রির ব্যাপারে ভবিষ্যতে অস্থায়ী দোকানগুলোর জন্য খাদ্য বিক্রয়ের লাইসেন্স নিতে হতে পারে। এছাড়াও নজর দেওয়া হচ্ছে ফাস্টফুডের স্টলগুলিতেও। পর্যটকরা যাতে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব না বোধ করেন, বেড়াতে এসে খাবার খেয়ে সমস্যায় না পড়েন সেটা নিশ্চিত করতে চাইছি আমরা।’ ওই আরও আধিকারিক বলেছেন, ওই দুই তরুণ তরুণী অ্যালার্জিতে ভুগছিলেন, প্রাথমিকভাবে এটাই সত্যি কিন্তু শুধু মৃত্যু রোধ করাটাই আমাদের লক্ষ্য নয়, আমরা চাইছি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য পাক দিঘায় আসা পর্যটকরা। রামনগর ১ বিডিও বিষ্ণুপদ রায় জানিয়েছেন, আমরা নমুনা সংগ্ৰহ করেছি। পরীক্ষার পর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য ২৩শে ডিসেম্বর রাতে নিউ দিঘার সৈকতে বেড়াতে বেড়াতে একটি স্টল থেকে রান্না করা কাঁকড়া খেয়েছিলেন বছর উনিশের এক তরুণী। দিঘা রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি করার আধঘন্টার পর সেখানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। পুলিশ জানিয়েছিল মৃত তরুণীর নাম দীপিকা ভকত। বাড়ি বীরভূম জেলার রামপুরহাটের হাটতলাতে। ওইদিনই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অ্যালার্জি সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে পরিবারের সঙ্গে দিঘায় বড়দিনের ছুটি কাটানো পরিকল্পনা করেন। ফিরে গিয়ে রিপোর্ট মোতাবেক চিকিৎসা করানোর কথা ছিল কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় ওই মর্মান্তিক ঘটনা।
ওই ঘটনার মাস খানেক আগে নভেম্বরের ২০ তারিখে দিঘায় বেড়াতে এসে ঠিক একই ভাবে কাঁকড়া খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতার বেহালার যুবক সৌম্যদীপ শিকদারের। হোটেলের রেস্টুরেন্টে দুপুরে ভাতের সঙ্গে কাঁকড়া খাওয়ার পর তাঁর মুখে-ঠোঁটে অস্বস্তি শুরু হয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই হোটেলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবার জানিয়েছিল তাঁরও অ্যালার্জি ছিল কাঁকড়া ও চিংড়ি মাছে। পর পর এই ঘটনায় একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছিল পর্যটকদের মধ্যে। এই নজরদারি ও অভিযানের মধ্য দিয়ে পর্যটকদের আস্থাও অটুট রাখতে চাইছে জেলা প্রশাসন।