নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী শনিবার রবিবার ২ দিনের জন্য যাঁরা দিঘা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাঁদের একটু ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে কারন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ( Cyclone Sitrang)কে ঘিরে বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর সমুদ্র উপকূলে। আমেরিকার আবহাওয়া দফতরের দেওয়া দিন দশেক আগের যে সতর্কতা বার্তাকে প্রায় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সতর্কবার্তাই গিলতে হল ভারতীয় আবহাওয়া দফতরকে (Indian Metrological Department) কে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের সিত্রাং ( Cyclone Sitrang) এর সম্ভাব্য আগমন জানিয়ে চলছে পুলিশের মাইকিং সতর্কতা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা-শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণি উপকূলে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে যাঁরা মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে আছেন তাঁরা যেন শনিবার (২২ অক্টোবর) রাতের মধ্যে সমুদ্রের পাড়ে ফিরে আসেন। এরই পাশাপাশি ওই দিন থেকেই পর্যটকদের জন্য সমুদ্র স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে এমন সম্ভবনার কথা জানানো হয়েছে।
ভারতের আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর সূত্রে
আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ঘূর্ণঝড় সিত্রাং সম্পর্কে মার্কিন উপগ্রহের দেওয়া তথ্য ক্রমশঃ সত্যি হচ্ছে। সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়! আন্দামান সাগরে তৈরি ঘূর্ণাবর্ত বৃহস্পতিবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপটি ২২ অক্টোবর, শনিবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আরও ৪৮ ঘণ্টা পর শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। যার ফলে কালীপুজোর আনন্দ মাটি হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে শুধুই মৎস্যজীবীদের ফিরে আসা কিংবা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নয়, তারই পাশাপশি সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে থাকা মানুষজনদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। নিবিড় প্রচার শুরু হয়েছে উপকূল জুড়ে।জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী ৯ টি ব্লক ও সংলগ্ন পঞ্চায়েত প্রশাসনকে সমন্বয় করেদুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করারনির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাপ্রশাসনের তরফে। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সহ সরকারি বেসরকারি বহুতল ভবনগুলি। মজুত রাখা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শুকনোখাবার, পানীয়জল-সহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীদের নিয়ে ৯ টি ব্লকের জন্যপ্রায় ২ হাজারটি আপৎ কালীন গোষ্ঠী তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া দুর্যোগপরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে ২৩ তারিখ থেকে ব্লক, মহকুমা ওজেলাস্তরে চালু করা হবে কন্ট্রোলরুম।
যদিও ঘূর্ণিঝড়টির অভিমুখ কোন দিকে থাকবে বা কোথায় আছড়ে পড়বে, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানায়নি আবহাওয়া দফতর। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুর্যোগ মোকাবিলায় সমস্ত লাইন ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক, মহকুমাশাসক, বিডিওদের সঙ্গে বৈঠকে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ঝড় এই জেলার উপকূলে আছড়ে পড়বে এটা ধরে নিয়েই যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।
আলিপুর জানিয়েছে ,ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট ভাবে জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে শনিবার যখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে, তখন তার অবস্থান থাকবে মধ্য ও সংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। এর পরের ৪৮ ঘণ্টায় আরও শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপ যখন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে, তখন সেটির অবস্থান থাকবে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে। নিম্নচাপটির অবস্থান ও গতিমুখ দেখে আবহবিদরা মনে করছেন, ২৪ অক্টোবর, সোমবারই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ওই দিনই কালীপুজো। ফলে দুর্গা পূজার মতই এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে দীপাবলির উৎসবও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।