নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্য তৃনমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন ‘জন সাধারনের কমিটি’র আহ্বায়ক ছত্রধর মাহাতের ছকেই হত্যা করা হয়েছিল লালগড়ের সিপিএম (CPM) নেতা প্রবীর মাহাতোকে। বৃহস্পতিবার কলকাতা নগর দায়রা আদালতে ৯৬ পাতার চার্জসিট পেশ করতে গিয়ে এমনই জানিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা NIA. ছত্রধর মাহাতোর সাথে এই চার্জসিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে আরও ১৭ জনকে। ছত্রধর মাহাতোর মতই ওই অভিযুক্ত প্রাক্তন মাওবাদী অথবা জনসাধারণের কমিটির একটি বড় অংশই বর্তমানে শাসক দলের সঙ্গে রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১৪ জুন লালগড়ের ধরমপুরে। ওই সিপিএম নেতাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিল। ধরমপুরের জঙ্গলে ফেলে রাখা সেই সিপিএম নেতার মৃতদেহের পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল বেশকিছু পোস্টার। যে পোস্টারে লেখা হয়েছিল এই মৃতদেহ যদি কেউ স্পর্শ করে, তবে তারও একই হাল হবে। ঘটনার ঠিক তিনদিন আগেই পাশের গ্রাম মধ্যমকুমারীতে খুন হয়েছিলেন সিপিএমের আরেক নেতা সালকু সরেন। মাওবাদী বর্বরতার সেই অধ্যায়েই শুরু হয়েছিল এমনই ঘোষণা, মৃতদেহ যে স্পর্শ করবে তারও একই হাল হবে। প্রবীর মাহাতোকে খুনের পর তাঁর পাশে ফেলে রাখা ওই পোষ্টার উল্লেখ করে NIA চার্জসিটে জানিয়েছে, ‘ নৃশংসতার দিক থেকে এটি যুগান্তকারী’ ঘটনা।
মোট ২৫ জনের সাক্ষ্য ও নানাবিধ প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে NIA. মূলচক্রী বা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নাম রয়েছে তৎকালীন পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণ কমিটির নেতা ছত্রধরের নাম। চার্জশিটে নাম থাকা প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ইউএপিএ (UAPA) বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে মামলা আনা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির আরও পাঁচটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। উল্লেখ্য ছত্রধর মাহাতো বর্তমানে জেলেই রয়েছেন। কয়েকমাস আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে NIA. গ্রেপ্তারের আগেই তাঁকে নিজেদের দলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র করেছিল তৃনমূল কংগ্রেস।
ছত্রধর মাহাতো যদিও NIA তদন্ত প্রসঙ্গে প্রতিহিংসার তত্ত্বই খাড়া করেছিলেন। বলেছিলেন, জেল থেকে ছাড়া পাবার পর শাসকদলে যোগ দেওয়াতেই বিজেপি এই প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। একই অভিযোগ করেছিলেন ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি। নিয়তিকে রাজ্য শিশু কল্যাণ দপ্তরের সদস্যা হিসাবে নিযুক্ত করেছে বর্তমান সরকার। মোটা ভাতা ও সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন তিনি। নিয়তিও বলেছিলেন, দিদির আদর্শের সঙ্গে থাকার জন্যই তাঁর স্বামীর এই দুর্ভোগ।