নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশের সঙ্গে এরাজ্যেরও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দৈনিক আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হল দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar) শিবির করার কর্মসূচি। পাশাপাশি, আগামী সোমবার, নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যে স্টুডেন্ট ক্রেডিউ কার্ড বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল তাও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ৩ জানুয়ারি স্টুডেন্ট উইক (Student Week) পালনের অনুষ্ঠানও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতির উপর বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীদিনে পরিস্থিতি বিচার করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য গত ৩দিন ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার দৈনিক সংক্রমন। বছরের শেষ ৩দিন অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৯, ৩০ ও ৩১শে ডিসেম্বর রাজ্যের দৈনিক সংক্রমন আশঙ্কা জাগিয়েছিল বিশেষজ্ঞদের। বুধবার যেখানে দৈনিক সংক্রমন ছিল ১হাজার ৮৯ বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২হাজার ১১৮। শুক্রবার, বছরের শেষদিনে সংক্রমন হয়েছিল ৩, ৪৫১ জন। বছরের প্রথম দিনেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪, ৫১২ জন। যদিও রাজ্য জানিয়েছে
বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশই উপসর্গহীন। উপসর্গযুক্ত রোগী ২০ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে ১৭ শতাংশই বাড়িতে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। মাত্র ৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। জোড়া টিকাকরণের ফলেই এ বার উপসর্গযুক্ত রোগী এবং মৃত্যুর হার কম বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। তবে একইসঙ্গে তাঁরা হু-হু করে সংক্রমণ বাড়তে থাকা নিয়েও গভীর উদ্বেগে। তাঁদের বক্তব্য, মানুষকে সচেতন হতে হবে। একা প্রশাসনের পক্ষে কঠোরতম বিধিনিষেধ আরোপ করেও এই সংক্রমণের ঢেউ সামাল দেওয়া সম্ভবপর হবে না। আর সেই পরিস্থিতিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
জানুয়ারি মাসে দুয়ারে সরকার শিবির করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে প্রায় আট হাজার শিবির তৈরি করে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প হওয়ার কথা ছিল। তিনটি নতুন প্রকল্পও শুরু করার কথা ছিল এই শিবিরে। সেই সবই আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাতিল করা হয়নি অনুষ্ঠান। আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এর আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ৩ জানুয়ারি থেকে বেশ কিছু কড়া বিধিনিষেধের পথে হাঁটতে পারে রাজ্য সরকার। কোভিড পরিস্থিতি কেমন থাকে, তা বিচার করে স্কুল-কলেজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল।
এখনও পর্যন্ত ভয়ঙ্কর আতঙ্কের কারণ তৈরি না হলেও রাজ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসক মহলে একটা চিন্তার কারণ তৈরি হয়েছে। কারণ, শেষ এক সপ্তাহে রাজ্যে লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণের পরিমাণ। একে বারে তিন সংখ্যা থেকে শুরু করে কয়েকদিনের মধ্যে শুধু চার অঙ্কে পৌঁছে গিয়েছে সংক্রমণ তাই নয়, প্রায় চার হাজার ছুঁয়ে ফেলেছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। কলকাতাতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বড়েছে সংক্রমণ। চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরে সংক্রমণের হার। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আশঙ্কা তৈরি করছে। এখনও প্রথম বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সংক্রমণের হার বৃদ্ধি না পেলেও আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে চাইছে রাজ্য সরকার। দুয়ারে সরকারের শিবিরে সাধারণত অনেক মানুষের ভিড় হয়। সেই ভিড় থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত শিবির স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়তে ৩ জানুয়ারি অর্থাৎ, সোমবার থেকে কিছু কিছু বিধিনিষেধ আবার চালু করা হবে। তেমন হলে স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুদিনের জন্য ‘ছুটি’ ঘোষণা করা হতে পারে। সরকারের তরফে প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। সরকারি সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে যে ভাবে রাজ্য এবং বিশেষত কলকাতায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন নবান্ন। শনিবার ওই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই সিদ্ধান্ত হয়, সোমবারের দু’টি সরকারি কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখা হবে।