নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার সারা বাংলাকে আশ্বস্ত করে আগামী মাসেই স্কুল খোলার কথা ঘোষণা করেছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৬ই নভেম্বর থেকেই শুরু হওয়ার কথা নবম, দশম ও একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠক্রম কিন্তু তারইমধ্যে এল আশঙ্কার বার্তা। রাজ্যে করোনা সংক্রমন মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ২শতাংশ বেড়ে গিয়ে ৩ শতাংশ ছোয়াঁর মুখে। পূজার আগে রাজ্যে সংক্রমনের হার ছিল ১শতাংশ যা পূজার পরেই ২শতাংশ হয়ে গেছিল। আর তার কয়েকদিনের মাথায় তা পৌঁছে গেল প্রায় ৩ শতাংশের কাছাকাছি। উৎসবে মানুষের ঢল নামতে দেখে করোনা সংক্রমনের হার বাড়ার আশঙ্কা করেছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা ছিল কালীপূজার পরেই বাড়াবাড়ি জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে সংক্রমন। ঘটনা সেই পথেই যেতে চলেছে মনে হচ্ছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইতিমধ্যে রাজ্যের তিন জেলায় প্রায় ১৫০টি কন্টেন্টমেন্ট ঘোষণা করতে হয়েছে নবান্নকে।
উৎসব শুরুর পর থেকেই করোনা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছিল রাজ্যে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, উৎসবের সময় বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে লাগামছাড়া ভিড়ের কারণেই নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ এসে না গেলেও রাজ্যে ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা হাসপাতাল গুলিতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগী ভর্তি। অথচ পুজোর আগে চিত্রটা ছিল অন্য রকম। সেই সময়ে যেখানে রাজ্য জুড়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০-র আশপাশে ছিল, এখন সেটাই হয়েছে প্রায় চারগুণ। এ সব দেখে চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, উৎসবমুখর বাঙালিকে এ বার ভিড়ের মূল্য চোকাতে হবে!
তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংক্রমণের দৈনিক হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কলকাতায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের থেকে কমলেও তা ফের ২০০-র গণ্ডি পার করেছে। এই মুহূর্তে এ শহরে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় দেড়শো জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া, এক দিনে দৈনিক টিকাকরণ এবং কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই করেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৫। ওই সময়ের মধ্যে কলকাতার ২২৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কলকাতা শহরের আশপাশের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক আক্রান্ত ১৪২। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৬৯, হাওড়ায় ৬৭, হুগলিতে ৬২ জনের কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। নদিয়ায় আক্রান্ত আরও ৪৫ জন। এ ছাড়া, রাজ্যের প্রায় সবক’টি জেলায় কমবেশি নতুন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ২৬০ জনের করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও এই মুহূর্তে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮৬৯। তার মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতার বাসিন্দা ২ হাজার ১ জন। প্রসঙ্গত, সংক্রমণে রাশ টানতে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জেলায় দে়ড়শোর বেশি এলাকায় কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
সোমবার দৈনিক সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও এর দৈনিক হার বেড়ে হয়েছে ২.৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৩ শতাংশের কাছাকছি। হিসাব অনুযায়ী সংক্রমনের হার ৫শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে লকডাউনে চলে যায় রাজ্য গুলি। সেই অবস্থা থেকে মাত্র ২শতাংশ দুরে রয়েছে রাজ্য। পূজার পর থেকে সংক্রমনের হার দেখে চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল দীপাবলির সময় এই হার না ভয়াবহ আকার ধারন করে। দীপাবলি আর ১সপ্তাহ মত দুরে। সংক্রমন বৃদ্ধির হার ততদিনে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার।
গত শনিবারই করোনা নিয়ে রাজ্যের সব জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বৈঠকে জেলাশাসকরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পুলিস সুপাররা। পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতা, মালদা, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান ও দার্জিলিং জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বেশি। বৈঠকে তাই এই জেলাগুলোর জেলাশাসকদের আলাদা করে নির্দেশ দিলেন মুখ্যসচিব। তারই ভিত্তিতে সোমবার ৭টি জেলার আক্রান্ত এলাকাগুলিতে কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া অবধি উত্তর ২৪পরগনায় ৫১টি, দক্ষিন ২৪পরগনায় ৪২টি, হুগলি জেলায় ৩৩টি, মুর্শিদাবাদে ৩৬টি, বাঁকুড়ায় ১২, দক্ষিণ দিনাজপুরে ২০টি এবং জলপাইগুড়িতে ৯টি মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপুরে কয়েকটি কন্টেনমেন্ট জোন করা হয়েছে।