নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্য পুলিশের কনস্টেবলরা যখন মাইনের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তখন সেহগল হোসেনের দিকে তাকিয়ে একটু শান্তি পেতে পারেন। সেহগেলও কাজ করেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে। বীরভূমের বেতাজ বাদশা তৃনমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের দেহরক্ষী সেহগল হোসেনের মোট সম্পত্তির পরিমান ৫০কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI আধিকারিকরা। ২০০০ সালে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল সেহগলের বাবার। তিনিও ছিলেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল। কিছুদিনের মধ্যেই বাবার চাকরি পান সেহগল আর তার কিছুদিনের মধ্যেই বহাল হন অনুব্রত মন্ডলের দেহরক্ষী হিসাবে। ব্যস্! আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
গরু পাচার কান্ডে সম্প্রতি তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। আর তারপরই জানা গেছে তাঁর সম্পত্তির কিছু হাল হকিকৎ। জানা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে তাঁর প্রাসাদোপম বাড়িএবং কলকাতার নিউ টাউনে তিন-তিনটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। সিবিআইয়ের দাবি, নথিপত্র যাচাই করে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তির সবটাই চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে তৈরি করেছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে এর কোনও টাই প্রাপ্য নয়। না, শুধু বাড়ি-ফ্ল্যাট নয়। এরপর রয়েছে তাঁর অসংখ্য জমি, অন্যান্য সম্পত্তি, নগদ টাকা, গহনা! সিবিআই সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে সেহগাল বেশির ভাগ সম্পত্তিই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে লিখিয়ে রেখেছেন। নিউ টাউনের তিনটি ফ্ল্যাটের মধ্যে দু’টি আছে স্ত্রীর এবং একটি পরিচারিকার নামে। সেই তিনটি ফ্ল্যাটে পাওয়া নগদ ও গয়নার অর্থমূল্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা।
মুর্শিদাবাদের ডোমকলে প্রতিবেশীদের দাবি, অনুব্রত মন্ডলের দেহরক্ষী হওয়ার পর থেকেই হু হু করে বেড়েছে সেহগালের সম্পত্তি। অনুব্রতের দেহরক্ষী হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর স্ত্রীও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। আর অন্যদিকে সেহগাল নামে-বেনামে পরপর জমি কেনে। এনিয়ে আলোচনা চলত আড়ালে কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেননা। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও শাসক দল এবং সেহগলের অনুগামীদের ভয়ে সরাসরি কেউ মুখ খোলেননি এতদিন। তাঁরাই এখন বলছেন ডোমকল শহরে জমি বিক্রির কথা শুনলেই হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ত সেহগাল।
প্রশ্ন উঠেছে সিবিআইয়ের নজরে সেহগাল এলেন কী ভাবে? জানা গেছে গরু পাচারকাণ্ডে এনামুল হককে গ্রেফতারের পরই তাঁর কললিস্ট থেকে উঠে আসে সেহগলের নাম। দীর্ঘক্ষণ ধরেই গরুপাচারের আন্তর্জাতিক পান্ডা এনামুলের সঙ্গে কথা হত সেহগলের। কিন্তু সেহগল কী শুধু নিজের হয়েই কথা বলতেন নাকি অনুব্রত মন্ডলের হয়ে? সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “দেহরক্ষী নয়, ধরা তো দরকার ছিল দেহটাকেই।” মানুষের আরও দাবি, যদি দেহরক্ষীরই ৫০কোটির সম্পত্তি হয় তবে তাঁর নেতার সম্পত্তি কত? সিবিআই আধিকারিকরা বলছেন, সে সবেরও হিসাবপত্র চলছে।