নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা কালে মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির পরিমান। কারন হিসাবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, দীর্ঘ লকডাউনের ফলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে রান্না করা খাবার পরিবেশন বন্ধ থাকা তার একটি বড় কারণ। পরিস্থিতি কাটিয়ে ক্রমে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন, ফের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শুরু হয়েছে রান্না করা খাবার পরিবেশন। দেশের অন্যান্য অংশের চাইতে বাংলায় স্কুল কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বেশকিছুটা পরে চালু হওয়ায় সঙ্কট এখানে কিছুটা গভীর হয়েছিল। যাইহোক তারপরেও স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার চালু হওয়ায় স্বস্তির হাওয়া। প্রচুর গরিব ছেলেমেয়ে অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার কিংবা স্কুল থেকে রান্না করা খাবার পেয়ে থাকে। কিন্তু রাজ্য সরকারের একটি সাম্প্রতিক নির্দেশে কোপ পড়েছে শিশুদের জন্য বরাদ্দ পুষ্টিতে।
জানা গেছে রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বা আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে শিশু,আসন্নপ্রসবা এবং সদ্য প্রসূতিদের জন্য এতদিন যাবৎ বরাদ্দ ডিমের আংশিক ছাঁটাই করেছে রাজ্য সরকার। যার ফলে উদ্বিগ্ন গরিব, প্রত্যন্ত এলাকার অভিভাবকরা। চলতি বছরের ১৫ই জুন ফের নতুন করে পুরোদমে চালু হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলি কিন্তু তার একমাসের মাথায় ১৫ই জুলাই সরকারের ডিমের বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের নির্দেশ ফের উদ্বিগ্ন করেছে অভিভাবকদের। ১৫ই জুলাই রাজ্যের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজ্যের ২৪ জন জেলাশাসককে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়ে অবগত করিয়েছেন যে এবার থেকে সপ্তাহের ৩ দিন অর্ধেক করে ডিম দেওয়া হবে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী সপ্তাহের দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ মঙ্গল,বৃহস্পতি ও শনিবার খাবারের সাথে অর্ধেক ডিম পাবে বাকি ৩দিন অর্থাৎ সোম, বুধ, শুক্রবার আগের মতই গোটা ডিম পাবে।
উল্লেখ্য এই অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার গুলিতে প্রাক প্রাথমিক পাঠের সাথে শিশুদের পুষ্টিজাতীয় খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। ৬ মাস থেকে ৬ বছরের শিশুদের এই খাবার পরিবেশনের উদ্দেশ্যই হল শিশুদের শরীরে পুষ্টির মাত্রা বজায় রাখা। পাশাপাশি গর্ভবতী ও সদ্য প্রসূতিদেরও খাবার পরিবেশন করা হয় গর্ভস্থ শিশু কিংবা সদ্যজাত শিশু যাতে মায়ের মাধ্যমে পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সপ্তাহের তিনদিন ডিমের মাত্রা কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। তাঁদের প্রশ্ন একে তো লকডাউন গরিবের অর্থনৈতিক অবস্থানে জোরালো আঘাত হেনেছে তার ওপর নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে গ্রামাঞ্চলে ১০০দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই মুহুর্তে যাঁদের দিন গুজরানই অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাঁরা বাড়ির শিশু, আসন্নপ্রসবা অথবা সদ্য প্রসূতিকে আলাদা করে পুষ্টি জোগাবেন কী করে? অভিভাবকদের আরও প্রশ্ন রাজ্য সরকার যদি অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তবে শৈশবের ওপর কোপ কেন? একটি শিশুর দেড় খানা ডিমের পয়সা বাঁচিয়ে সরকারের কতটা সাশ্রয় হবে?