নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলা আর ঝাড়খণ্ডের একটি প্রান্তিক গ্রামে শবর জনজাতির ছোট ছোট শিশুদের জন্য একটি পাঠশালা চালু করল দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। উদ্দেশ্যে বিনোদনের মাধ্যমে কচিকাঁচাদের পঠনপাঠনের অভ্যাস গড়ে তোলা। ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্গত বেলপাহাড়ী থানার শিমুলপাল গ্ৰাম পঞ্চায়েত এর শাঁখাভাঙা মোহনডাঙ্গা শবর পাড়ায় শনিবার ভাইফোঁটার দিনেই এই পাঠশালার শুভ সুচনা করল ‘মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ’ ও কাশীনাথ আচার্য্য মেমোরিয়াল সোসাইটি। প্রাথমিকভাবে ৩০ জন শবর বালক বালিকাকে দিয়েই এই পাঠশালা চালু হয়েছে বলে জানালেন সমাজসেবী ঝর্ণা আচার্য্য।
কাশীনাথ আচার্য্য মেমোরিয়াল সোসাইটির কর্ণধার ঝর্ণা প্রায় আড়াই দশক ধরে এই পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা ঊষর বন্ধুর এলাকার প্রান্তিক এবং আদিমতম উপজাতি শবরদের নানাবিধ কল্যাণ কাজের সঙ্গে নিযুক্ত রয়েছেন। সেই গভীর পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি বলেন, “প্রকৃতির একনিষ্ঠ সন্তান এই শবর সমাজের শিশুরা প্রকৃতির নিয়মেই চলে। প্রথাগত পদ্ধতিতে শিক্ষাদানে তাদের রপ্ত করা খুবই কঠিন কাজ। তারা আমাদের ১০টা-৫টার নিয়ম মানতে চায়না, মানতে চায়না নাগরিক অনুশাসন। যে কারনে শিশুবয়সেই তারা স্কুল ছুট হয়ে পড়ে। বর্ষায় তারা দলবেঁধে মাছ ধরতে যায়। এখন বর্ষাতো আর স্কুলের নিয়ম মেনে হয়না। যখনই ভারী বৃষ্টি হবে জলের ধারায় খালবিলের মাছ উঠে আসবে জলের স্রোত বেয়ে উপরিভাগে। অমনি তারা ছুটবে মাছ ধরতে। তাদের স্কুলে আটকে রাখা মুশকিল। এইরকম নানা অভ্যাস রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্যে তাদের অভ্যাসের সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রাথমিক পাঠ শেখানো যাতে পড়াশুনাটা বোঝা না ভাবে তারা। সেই কারণেই আমাদের পাঠশালার নাম আনন্দ পাঠশালা।”
এই পাঠশালা চালানোর জন্য আপাততঃ নিয়োগ করা হয়েছে শবর জনজাতিরই সন্তান জহর শবর নামে এক যুবককে। শীঘ্রই নিয়োগ করা হবে আরও একজনকে। এলাকায় প্রথাগত পদ্ধতিতে পড়ানোর জন্য একটি সরকারি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে ১০টা থেকে পঠন পাঠন চলে। আপাততঃ সেটি করোনার জন্য বন্ধ। সেটি চালু হলে সেখানে এই শিশুরা যেমন পড়ত পড়বে। আনন্দ পাঠশালায় পড়ানো হবে তার আরও আগে সকাল বেলায়। উদ্দেশ্য সেখানকার ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা এবং শিশুদের পঠনপাঠনে অভ্যস্ত করে তোলা। শুরুর দিনটা ভাইফোঁটা উদযাপনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে। শবর বালিকারা তাদের গ্রামের বালকদের পাশাপাশি অপর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেদিনীপুর ছাত্র সমাজের সদস্যদের বরণ করে নেয়।
ছাত্রর সমাজের পক্ষ থেকে ৩০ জন শবর শিশু র হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়া হয় । ছাত্রর সমাজের অন্যতম সদস্য অভিজিৎ চক্রবর্তী মেয়ে মনুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আনন্দ পাঠশালায় ৩০ জন ছাত্রছাত্রী কে শিক্ষা সামগ্ৰী তুলে দেওয়া হয়। প্রদান করা হয়েছে ব্ল্যাক বোর্ড সহ পাঠশালা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সামগ্ৰী। মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ’ এর সভাপতি কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী ও কোষাধ্যক্ষ কৌশিক কঁচ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের আরেক সমাজসেবী শিক্ষক সমাজকর্মী শান্তনু অধিকারী ও ছাত্র সমাজের অন্যান্য সদস্যরা।