নিজস্ব সংবাদদাতা: এক যৌন নিগ্রহের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক যৌন নিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ্যে এল খড়গপুর শহরে। আর এবার নির্যাতিতা বালিকাকে যৌন নিগ্রহের দায়ে অভিযুক্ত হল স্বয়ং সৎ-বাবা। খড়গপুর পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টাউন হল লাগোয়া কালীনগর বস্তি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার। বিষয়টি জানার পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন বালিকার মা। মঙ্গলবার ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। ধৃতের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন এলাকার মানুষজন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে অভিযুক্তের নাম মোহন রায়। ৩৬ বছরের মোহন তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরই স্থানীয় এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করে সে। ওই মহিলার আগের পক্ষের একটি মেয়ে আছে যার বর্তমান বয়স আট বছর। কালীনগর বস্তির একটি ঘরে মা ও সৎ মেয়েকে এলাকায় থাকতে শুরু করে মোহন। মোহন দিন মজুরি করত অন্যদিকে তার বর্তমান স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করতেন। জানা গেছে
মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে গত শনিবার ওই ৮ বছরের বালিকাকে যৌন নিগ্রহ করে মোহন। এরপর সে মেয়েটিকে এই বলে হুমকি দেয় যে ঘটনার কথা যদি মা অথবা অন্য কাউকে জানায় তবে এ বিষয়ে কাউকে কিছু জানালে তাকে ও তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে।
যদিও সৎ বাবার ওই হুমকির কাছে মাথা নোয়ায়নি বালিকা। মা ফিরতেই মায়ের কাছে সমস্ত কিছু খুলে বলে। ঘটনায় প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে যান মা। এক দিকে নিজেদের অনিশ্চয়তা অন্যদিকে মেয়ের প্রতি এই আচরণ এই দুইয়ের দোটানায় পড়ে যান তিনি। শেষ অবধি মেয়ের প্রতি হওয়া এই জঘন্য অপরাধের বিপক্ষেই দাঁড়ায় মা এবং সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দেরি করেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় মোহনকে। তাকে গ্রেপ্তার করার পর তার বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাটি জানার পরই মোহনের বিরুদ্ধে ধিক্কাররে ফেটে পড়ে সারা বস্তি। একজন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় তার বিরুদ্ধে কঠিনতর শাস্তির দাবি ওঠে।
মাত্র দু’দিন আগেই শহরের এক ১৫ বছরের মূক ও বধির নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল খড়গপুর টাউন থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ওল্ড সেটলমেন্ট এলাকায়। ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে অরবিন্দ নামে এক যুবক। একটি পাম্প হাউসে আটকে রেখে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলা দায়ের হয়েছে। তারপরই ফের আরও একটি যৌন নির্যাতনের ঘটনায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শহরের বাসিন্দাদের কপালে। গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরপর এমন ঘটনায় চিন্তিত খড়গপুরের বাসিন্দারা। দুই ক্ষেত্রেই পুলিশের তৎপরতা শহরের ভরসার জায়গা হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কোথায় যাচ্ছে এই পাশবিক প্রবৃত্তিগুলি? পিতার আশ্রয়ে থাকার ‘ভরসা’ ক্রমাগত কী হারিয়ে ফেলছে এই সমাজ!
উল্লেখ্য মঙ্গলবারই খড়গপুর শহরে ২০নং ওয়ার্ডে মুক ও বধির কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে খড়গপুর টাউন থানায় আজ বিক্ষোভ দেখালো আমরা বামপন্থী সংগঠন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল টাউন থানার IC সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা পুলিশের কাছে দাবি করেন,ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সকলকে অবিলম্বে গ্ৰেপ্তার করতে হবে।রাজনীতির রং না দেখে সঠিক তদন্ত করতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি র দাবী করা হয়।শহরের বস্তি গুলোতে পুলিশি নজরদারি আরো বাড়ানোর দাবী করা হয়।খড়গপুর শহরের মহিলাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা। খড়গপুর টাউন IC বিশ্বরঞ্জন ব্যানার্জী ওই প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে বলে।