Saturday, July 27, 2024

Education: রাজ্যের সেই তালা ঝোলানো ৭৯ বিদ্যালয় দিয়েই শিক্ষার বেসরকারিকরন শুরু ? এবার শিক্ষাতেও কী ফেল কড়ি, মাখো তেল! উঠছে প্রশ্ন

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: কিছুদিন আগেই রাজ্যের ৭৯ জুনিয়ার ও হাইস্কুলে তালা দিয়েছেন সরকার। পড়ুয়া নেই এই যুক্তিতে বিলোপ করা হয়েছে স্কুল গুলির অস্তিত্ব। শিক্ষকদের অন্যত্র সরানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কী করা যায় ওই সরকারি সম্পত্তি নিয়ে। ইতিমধ্যে আরও একটি মজার জিনিস নজরে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, ‘এসএসসি ছাড়াই রাজ্যের সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার পদে চাকরি পেতে আবেদন করুন।’ এখন প্রশ্ন উঠছে সরকারি বা সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকতার চাকরি পেতে হলে তো আইন অনুযায়ী এসএসসি ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। তাহলে এরা কারা?

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

খোঁজ খবর নিয়ে যা মনে হচ্ছে সরকার যে পিপিপি মডেলে স্কুল চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে এটি তারই প্রাথমিক উদ্যোগ। পিপিপি মডেল অর্থ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ। সরকারের এক্ষেত্রে একটাই ভূমিকা থাকে তা’হল জমি বা পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে দেওয়া। বাকি নিয়োগ, পড়ুয়া ভর্তি, টিউশন ফি আদায় সবই বেসরকারি উদ্যোগ। প্রশ্ন তাহলে কী ওই ৭৯ স্কুল এখন বেসরকারি হাতে যেতে চলেছে? অনেকেই সেটা আশঙ্কা করছেন।

রাজ্যের একটি দৈনিক পত্রিকায় দাবি করা হয়েছে গুজরাটের আদানি শিল্প গোষ্ঠীর হাতে প্রাথমিকভাবে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ওই পত্রিকার তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘গত ২ডিসেম্বর নবান্নে এসে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করে গিয়েছিলেন আদানি গ্রুপের প্রধান গৌতম আদানি। মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির নবান্নে আসার খবর প্রশাসনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত গোপন রাখা হয়েছিল। গৌতম আদানির পর গত ১০ফেব্রুয়ারি নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন আদানি পুত্র করণ আদানি। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি এরাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ঘটনা হলো, ২০০৩সাল থেকে আদানি গোষ্ঠী শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করে। ‘আদানি বিদ্যা মন্দির’ শিক্ষাক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর নয়া বিনিয়োগের ক্ষেত্র। আদানিদের হাতে রাজ্যের সরকারি শিক্ষাঙ্গনকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে রাজ্য।’

এই ব্যাপারে একটি খসড়া নীতিও প্রণয়ন করার কাজ সরকার শেষ করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে,
‘ স্কুল ইন পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) মোড, ২০২২।’ রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তৈরি সেই খসড়া গাইডলাইন পাঠানো হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন বিভাগে। শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব চিঠি দিয়ে খসড়া নিয়ে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর, কারিগরি শিক্ষা, নগরোন্নয়ন দপ্তর, কলকাতা কর্পোরেশন, সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের প্রধান সচিবদের কাছে মতামত চেয়ে পাঠিয়েছে। ৩১জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। তারমধ্যে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলিতে মতামত পৌঁছে গেছে শিক্ষা দপ্তরে।

জানা গেছে ওই খসড়া নীতিতে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেবে জমি, বাড়ি। বেসরকারি সংস্থাকে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ও বাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য সময়ে সময়ে প্রস্তাব তৈরি করবে। যার মূল উদ্দেশ্য হিসাবে স্পষ্টতই বলে দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পিপিপি মডেলে স্কুল তৈরির জন্য সরকারের তরফে প্রস্তাব (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) আসার পর বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাতে অংশগ্রহণ করবে। কাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সরকারি স্কুলের জমি ও বাড়ি তা ঠিক করার সময় বিনিয়োগে আগ্রহী সংস্থার শিক্ষাজগতে কাজের গুণগত মান ও আর্থিক ক্ষমতা বিচার করবে সরকার। ৮০শতাংশ প্রযুক্তিগত দিকের সঙ্গে ২০শতাংশ আর্থিক সক্ষমতা থাকলেই সরকারি সম্পত্তি তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে।

এই পিপিপি মডেলের স্কুলের শিক্ষক কারা হবেন? উত্তরে খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘স্কুল চালাতে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য নিয়োগের দায়িত্ব পালন করবে বেসরকারি সংস্থাই।’ পিপিপি মডেলে স্কুলে কত শিক্ষক নিয়োগ হবে তার সংখ্যাও ঠিক করার দায়িত্ব বর্তানো হয়েছে বিনিয়োগকারীদের ওপরই। আশঙ্কা এর ফলে একদিকে যেমন কম বেতনে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে তেমনই কমবে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত। কারন বিনিয়োগকারী এখানে ব্যবসা করতে আসবে।বেসরকারি হাতে যাওয়া স্কুলের পড়ুয়াদের ‘ফি’ ঠিক করবে বিনিয়োগকারী সংস্থাই। খসড়া নীতিতে সেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি বিদ্যালয়ের ওপরই।

কারা হবেন বেসরকারি সংস্থা? যে কোনও ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী, কোম্পানি, সোসাইটি ও ট্রাস্ট, পার্টনারশিপ ফার্ম রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি সম্পত্তির আগামীদিনে দখলদার হতে চলেছে। এরই সাথে বদলে যাচ্ছে ‘প্রধান শিক্ষক’ শব্দটিও। নয়া খসড়ায় প্রধান শিক্ষক এবার থেকে প্রিন্সিপাল কিংবা ডিরেক্টর হিসাবে চিহ্নিত হবে। স্কুল পরিচালন সমিতি বদল করে বোর্ড অব ডিরেক্টর করার কথাও বলা হয়েছে সরকারের খসড়া নীতিতে। সরকারের তরফে যুক্তি সাজানো হয়েছে, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অধীনে থাকা অব্যবহৃত পরিকাঠামোকে ব্যবহার করে রাজ্যে পিপিপি মডেলে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।

এই খসড়া র কথা জানাজানি হতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে শিক্ষক মহল থেকে। রাজ্যের বিদ্যালয় প্রধানদের সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিষ্ট্রেসস্ এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেছেন,’ শিক্ষায় পিপিপি মডেলের অর্থ সাধারণ মানুষের সন্তানদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহনের অধিকার কেড়ে নেওয়া। এর তীব্র বিরোধিতা করছি।” প্রায় একই কথা বলে ভবিষ্যতে সাধারণের শিক্ষা বিস্তার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী। অধিকারী বলেন, ‘ এই নীতি প্রণয়ন হলে একদিকে যেমন সাধারণ ঘরের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ কমতে শুরু করবে তেমনই অন্যদিকে দুই সমান্তরাল ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্য সৃষ্টি হবে যার মাশুলও দিতে হবে গরিব পরিবারগুলির পড়ুয়াদের। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।’

- Advertisement -
Latest news
Related news