নিজস্ব সংবাদদাতা: আর কদিন পরেই বাড়ি ফেরার কথা, ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল ২রা জানুয়ারির। বাড়িতে বৃদ্ধা মা আর স্ত্রী ছাড়াও মাধ্যমিক পাঠরত সন্তান আর ১৬ মাসের কন্যা। রবিবার রাতেও আধো আধো বলে কন্যা কথা বলেছে বাবার সাথে। আর তো মাত্র কটা দিন ! কিন্তু আগেই ফিরে আসতে হচ্ছে তমলুকের জওয়ানকে, আসতে হচ্ছে কফিনবন্দী হয়ে। শত্রু শিবির ও জঙ্গীদের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালাতে গিয়ে লাদাখের পাহাড়ি রাস্তায় টহল দিতে গিয়ে গাড়ি উল্টে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তমলুকের যুবক তথা CRPF জওয়ান নন্দলাল রানার। সোমবার সাত সকালেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরও ৩জন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৃতের বয়স ৩৬বছর। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে নন্দলাাল রানার পরিবার সহ পুরো এলাকাতেই।
জানা গেছে দুর্ঘটনায় মৃত ওই CRPF জওয়ান নন্দলাল রানার বাড়ি তমলুক থানার হরশঙ্কর গ্রামে। তিনি সিআরপিএফের ৪২ নম্বর ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন। সোমবার দুপুরে ওই ব্যাটেলিয়ান থেকেই নন্দলালের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় এই মর্মান্তিক খবর। আর সেই খবর পৌঁছাতেই কান্নার রোল পড়ে যায় নন্দলালের পরিবার এবং প্রতিবেশীদের বাড়িতেও। এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় থাকার কারনেই দাবানলের মত এই শোক সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র হরশঙ্কর গ্রামেই। দলে দলে শোকস্তব্ধ মানুষ ভিড় করেন তাঁর বাড়ির সামনে।
সিআরপিএফ সূত্রে নন্দলালের পরিবারকে জানানো হয়, ভোর থেকেই নন্দলাল এবং তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে টহল দিচ্ছিল লাদাখের রাস্তায়। আনুমানিক সাড়ে ৬টা-৭টা নাগাদ সিআরপিএফ জওয়ানদের ওই গাড়িটি পাহাড়ি উঁচু রাস্তা থেকে খাদে পড়ে যায়। সে সময় গাড়িতে থাকা ৪ জওয়ানই গুরুতর চোট পান। পরে খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ নন্দলালের মৃত্যু হয়। সিআরপিএফের বক্তব্য ঘন কুয়াশার কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। প্রথমে সনাক্ত করতে অসুবিধা হয় রানাকে। পরে তাঁর পরিচয়পত্র ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নন্দলালের পরিচয় জানা যায় আর সেটা জানার পরই যোগাযোগ করা হয় পরিবারের সঙ্গে।
দুর্ঘটনার খবর এসে পৌঁছেছে স্থানীয় নীলকণ্ঠা গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান তথা স্থানীয় তৃনমূল নেতা অশোক কুমার পাইকের কাছেও। অশোকবাবু আবার মৃত নন্দলাল রানার আত্মীয়। তিনি জানান, অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা দুপুর নাগাদ ঘটনাটি জানতে পারি। ওই পরিবারকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সিআরপিএফের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার দেহের ময়নাতদন্ত হবে। বুধবার দেহ বাড়িতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পর গ্রামে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। গোটা গ্রাম তাদের প্রিয় সন্তানকে শেষবারের জন্য দেখার অপেক্ষায়।
ঘটনার খবর এসে পৌঁছেছে তমলুক থানা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে। পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে পরিবার ও সিআরপিএফের সঙ্গে। সিআরপিএফ বিমান যোগে কলকাতা বিমানবন্দরে মৃতদেহ পাঠাবে তারপর সিআরপিএফের কলকাতা দপ্তর থেকে গাড়িতে করে তমলুকে আনা হবে দেহ। স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নিয়েই সিআরপিএফের জওয়ানরা পারিবারিক রীতিনীতি মেনেই সৎকার কার্য অবধি থাকবেন এমনটাই জানা গিয়েছে।