নিজস্ব সংবাদদাতা: সকাল ৬টা নাগাদ কলকাতা থেকে বেরুনোর সময়ও হৈ-চৈ আনন্দে কলকল করে হাসছিল ৭ বছরের শিশুকন্যাটি। এক সাথে নিজের বাড়ি আর মামাবাড়িতে যাওয়ার আনন্দ। আড়াইঘণ্টা পরে সব শেষ। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে অনাথ হয়ে গেল সাম্মি।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/IMG-20220416-WA0010.jpg)
শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা টোলপ্লাজা পেরিয়ে খড়গপুর লোকাল থানার হরিনার কাছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার যুবক ও তাঁর স্ত্রী এবং বড় মেয়ে। বেঁচে গিয়েও অনাথ হয়ে গেল কনিষ্ঠ কন্যা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন স্বামী ও স্ত্রী সমিত সামন্ত (39), বর্ণালী সামন্ত (37) এবং তাঁদের মেয়ে সিঞ্জিনী সামন্ত (11)। ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া-মুম্বাই ৬ নম্বর (বর্তমান ১৬নম্বর ) জাতীয় সড়কের ওপর (Howrah-Mumbai No. 6 National Highway).
জানা গেছে সমিতের বাড়ি মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ নগরে। লার্সেন এন্ড টুব্রো কোম্পানির (Larsen & Toubro) কোম্পানির পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার সমিত সপরিবারে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/IMG-20220416-WA0008.jpg)
শনি এবং রবিবার ২দিনের ছুটি কাটাতে দুই সন্তানকে নিয়ে কলকাতা থেকে মেদিনীপুরের পথে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। নিজের বাড়ির পাশাপাশি স্ত্রীর বাপের বাড়ি মেদিনীপুর শহরেরই স্টেশন রোডে ঘুরে আসার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।
নিজেদের ব্যক্তিগত হোন্ডাই আই টেন (Hyundai i10) (WB 82E 2293) নিয়ে কলকাতা থেকে সকাল ৬টা নাগাদ মেদিনীপুরে নিজেদের বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন সমিত বর্ণালী এবং দুই মেয়ে সিঞ্জিনী ও সাম্মি সামন্ত । গাড়ি চালাচ্ছিলেন সমিত নিজেই। ডেবরা টোল প্লাজা পেরিয়ে হরিনার কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল একটি ৪০৭ গাড়ি (WB 33E 2293)। সমিতের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটিতে।
মুহুর্তে দুমড়ে মুচড়ে যায় গাড়ির সামনের অংশ। সামনে বসে থাকা স্বামী-স্ত্রী খাঁচাবন্দী অবস্থায় প্রায় চেপ্টে যান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। গুরুতর জখম হয় পেছনে থাকা বড় মেয়ে সিঞ্জিনী, ছোট মেয়ে সাম্মিও আহত হয়। কিন্তু উচ্চতায় ছোট হওয়ায় সম্ভবতঃ কম আঘাত লাগে তার।
খড়গপুর গ্রামীণ থানার পুলিশ সবাইকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ( Medinipur Medical Collage And Hospital) নিয়ে এলে স্বামী-স্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মেডিক্যাল কলেজের ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় সিঞ্জিনীরও। সাম্মিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা গাড়ি চালাতে চালাতে হয়তো সমিতের তন্দ্রার ভাব এসে গিয়েছিল। অথবা স্বামী-স্ত্রী কোনও কথাবার্তায় এতটাই মশগুল ছিলেন যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটিকে খেয়াল করেননি। ঘটনায় অরবিন্দনগর ও স্টেশন রোডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।