নিজস্ব সংবাদদাতা : এখুনি ব্যবহার না করলে নষ্ট হয়ে যাবে ৭হাজার ব্যাগ সিমেন্ট ব্যাগ আর ১০০টন ইস্পাত। কিন্তু কিছুই করার নেই ঠিকাদারী সংস্থার, ২০ কোটির কাজ করে হাতে জুটেছে মাত্র ৮কোটি! বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি ঘোষণা ১০৮কোটি টাকার! যেখানে ঘোষিত বরাদ্দের মধ্যে আদতে মাত্র ১৩% বরাদ্দ সেখানে কোন ভরসায় বাকি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে ঠিকাদারি সংস্থা? অতএব প্যাক আপ! কাজ গুটিয়ে ফিরে যাচ্ছে ঠিকাদারি সংস্থা! কতদিনে নির্মাণ হবে পূর্ব মেদিনীপুরের স্বপ্ন, গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জানেনা! অনেকেই মনে করাচ্ছেন সেই দিঘা লাইনের কথা? এই দিঘা লাইন শব্দটা সরকারের ‘ ঘোষিত প্রকল্প এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অর্থনৈতিক বরাদ্দ’ সংক্রান্ত বাস্তব অবস্থার নিরীখে কৌতুক বা কটাক্ষ করে ব্যবহার করা হয়। সরকার যখন দিঘা অবধি রেল লাইন পাতার কথা ঘোষণা করেছিল তখন প্রতি বছর বাজেটে দু-পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করে রাখত ফাইল কেনার জন্য। যাতে মানুষ মনে করত যে সরকার দিঘা লাইন পাতছে। আর এভাবেই দিঘা অবধি রেল লাইন পাততে কয়েক যুগ কেটে গেছিল।
একই হাল কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের। ঢাক ঢোল পিটিয়ে ২০২০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। কিন্তু দু’বছরেও একটি ক্লাসরুম তৈরি হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজে ক্লাস করতে হয় কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। তবে কলেজের ক্লাসের সময় তাদের ক্লাস হয় না। তাদের ক্লাসের সময় সকালের দিকে। তাদের ক্লাস শেষ হলে শুরু হয় কলেজের ক্লাস। এখানেও কোনও স্থায়ী অভিজ্ঞ অধ্যাপক নিয়োগ করেনি রাজ্যের সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, পাঁচ-ছয় বছর কলেজে পড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন অধ্যাপকরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বটে কিন্তু ঘোষণা আর বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল ফারাক। কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলেও নেই লেখা পড়ার কোনও উপযুক্ত পরিকাঠামো। আবার কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নেই কোনও বরাদ্দ টাকা।
১৮ এপ্রিল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে গান্ধীজীর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরির কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। সরকার। চলতি মাসেই সেই নির্দেশ গত ৫ এপ্রিল মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শিক্ষা দপ্তরকে চিঠি (নম্বর-৫৪৬/ ডব্লিউ-৩৯৩) লিখেছেন পূর্ত দপ্তরের তমলুক ডিভিসনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। চিঠি জানাচ্ছে, গত ২ নভেম্বর একটি ভার্চুয়াল সভায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরির কাজ স্থগিত করার নির্দেশ দেয় উচ্চশিক্ষা দপ্তর। সেই অনুসারে ঠিকাদার সংস্থা ডিএমপি নির্মাণ প্রাইভেট লিমিটেডকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। তারপর ৫ মাসের বেশি কেটে গেলেও কাজ শুরু করতে বলা হচ্ছে না। এই অবস্থায় ওই ভবন তৈরির কাজ আদৌ আর হবে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে।
২০১৮ সালে গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু হলেও এখনও তৈরি হয়নি তার নিজস্ব কোনও ভবন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল ১০৭ কোটি টাকা। পরে আরও ঘটা করে ৫৬কোটি বরাদ্দ হতে চলেছিল বলে জানানো হয়। পরিকল্পনা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু ভিত্তি তৈরির কাজই হঠাৎ বন্ধ করা নির্দেশ এসেছে। । বর্তমানে মহিষাদল রাজ কলেজে কোনও রকমে বিশ্ববিদ্যায়ের ক্লাস চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু না হওয়ায় বাড়তি ছাত্র ভর্তি বা নতুন কোর্স চালুর ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইছেন, প্রথমে তিন তলা পর্যন্ত বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ করে দ্রুত সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস সরিয়ে নিয়ে যেতে। আপাততঃ সেই স্বপ্নের সমাপ্তি। ২৫০ জন শ্রমিক এখন ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।