নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৩কোটি টাকার সাপের বিষ তাও আবার কেউটে! সুদৃশ্য ক্রিস্টালের তিন জার ভর্তি করে এমনই কোবরা বিষ পাচার হচ্ছিল চিনে! জানা গেছে বাংলাদেশ থেকে এই বিষ সংগ্ৰহ করে জলপাইগুড়ি হয়ে চিনের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নিয়ে সলিন আখতার মান্ডু নামে এক ৩২ বছরের যুবক। যার বাড়ি। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত এলাকায়। বনদপ্তরের অনুমান জলপাইগুড়িতেই একই বিষ ভর্তি ক্রিস্টাল জার গুলি হস্তান্তর করার পরিকল্পনা ছিল অন্য কোনও ব্যক্তির আগে কিন্তু তার আগেই বনদপ্তরের ফাঁদে পড়ে যায় ওই যুবক।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের কাছে একটি বিশেষ সূত্রে খবর আসে জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন ৭৩ মোড় এলাকায় এই বিষ হাতবদল হবে। খবর পাওয়া মাত্র বনদপ্তরের স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স অভিযানে নামে। নির্দিষ্ট সূত্র ধরে এক যুবক কে বমাল সমেত গ্রেপ্তার করে। বনদপ্তর সূত্রে খবর, যারা এই বিষ পাত্র হাতবদল করে নিয়ে যেতে এসেছিল অভিযানের আঁচ পেয়ে পালিয়ে যায়। তবে পাচারে ব্যবহৃত একটি বিএমডব্লিউ গাড়িকে চিহ্নিত করেছে বনদপ্তর। এই গাড়িতে পালিয়ে যায় দুই পাচারকারী। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
বনদপ্তর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারছে বাংলাদেশ থেকে এই বিষ ভারতে ঢুকেছিল। এরপর তা জলপাইগুড়িতে হাতবদল হয়ে ডুয়ার্সের ভেতর দিয়ে চিনের পথে যেত। গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনকর্মীরা তার আগেই বামাল ধরে ফেলে যুবককে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এই বিষ ভারতে প্রবেশ করে। শুক্রবারই ধৃত যুবককে জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানায় বনদপ্তর। আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জলপাইগুড়ি আদালতে সহকারী সরকারি আইনজীবী সিন্ধু কুমার রায় জানিয়েছেন।
মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকলেও এ বিষ আদতে ফ্রান্স থেকে এসেছে কারন বিষ পাত্রের গায়ে লেখা রয়েছে ফ্রান্সের রেড ড্রাগন কোম্পানির নাম। বনদপ্তরের এক আধিকারিক জানান, এর আগে যে কয়েকটি সাপের বিষের জার উদ্ধার হয়েছে সবকটার গায়ে রেড ড্রাগন কোম্পানির লেবেল সাঁটা ছিল। পাচারকারীরা ফ্রান্স থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আনার পর ভুটান, নেপাল, চিনের মতো দেশে পাচারের জন্য জলপাইগুড়িকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে। ধৃত যুবকের কাছ থেকে তিন জার বিষ ছাড়াও কোবরা সাপের ছবি-সহ বেশ কিছু ক্যাটালগ উদ্ধার হয়েছে।
শুক্রবার ধৃত পাচারকারী যুবককে জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় বনদপ্তর। বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে সহকারী সরকারি আইনজীবী সিন্ধু কুমার রায় জানিয়েছেন। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, বাজেয়াপ্ত বিষের বাজার মূল্য আনুমানিক ১৩ কোটি টাকা। চিনে পাচারের উদ্দেশ্যে এই বিষ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। এই পাচার চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িয়ে রয়েছে। ধৃত পাচারকারী যুবক কে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বাকিদের ধরতে অভিযান চলবে বলে বনমন্ত্রী জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৫ সালে এই জলপাইগুড়িতেই প্রচুর পরিমাণে সাপের বিষ উদ্ধার করেছিল বৈকন্ঠপুর বনবিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জ। ছবি-প্রতীকি