নিজস্ব সংবাদদাতা: বগটুই গনহত্যাকাণ্ডে গুরুতর ভাবে পুড়ে যাওয়া নাজমা বিবিরও মৃত্যু হল। ঘটনার পর ১ সপ্তাহ তাঁর চিকিৎসা হচ্ছিল রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার সকালে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নাজমা বিবির। রামপুরহাটের বগটুই-কাণ্ডে আট জনের ম়ত্যুর কথা জানিয়েছিল সরকার। সেই হিসাব ধরলে ওই কান্ডে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯। অন্যদিকে বেসরকারি মতে বাগটুই গনহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০জন কারন দমকল তেমনই বলেছিল। সেই হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১১জন।
গত ২১ মার্চ রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে নাজমা বিবি সহ মোট ৪জন রেহাই পেলেও নাজমার শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে বার্ন-ইউনিট না থাকায় তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু যাতায়াতের দখল নিতে পারবেনা এই যুক্তিতে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছিল রামপুরহাটেই।
ঘটনার ২দিন পরেই ঘটনাস্থলে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও বলেছিলেন, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতায় যাতায়াতের ধকল সামলাতে পারবেননা নাজমা। তাই কলকাতা থেকে ভালো চিকিৎসক আনা হচ্ছে নাজমা বিবির চিকিৎসার জন্য। তবে অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। রবিবার রাত থেকে নাজমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। চিকিৎসকদের সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, মেডিক্যাল টিম সব সময় ছিল। এক্সপার্ট টিমও ছিল। কিন্তু চেষ্টা সত্ত্বেও ফেরানো গেল না ওঁনাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে যে মানুষটি আগুনে পোড়ার পর ৭দিন বেঁচে থাকলেন উপযুক্ত পরিকাঠামো পেলে তিনি শেষ অবধি বেঁচে যেতে পারতেন কিনা? রামপুরহাট থেকে এয়ার আ্যম্বুলেন্সে তাঁকে কী কলকাতায় নিয়ে যাওয়া যেতনা? চিকিৎসকরা জানান, শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল নাজেমার। নাজেমা বিবির রক্তচাপ অস্বাভাবিক ছিল। একই সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ‘ফ্লুইড’ বেরিয়েছিল। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে রক্তেও। মূত্রনালিতেও সংক্রমণ ছড়ায়। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। শরীরের কমে যায় অক্সিজেনের মাত্রাও। রবিবারই তড়িঘড়ি তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হয়েছিল। এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে গোটা বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়। মৃতার স্বামী রামলাল শেখের কথায়, ‘‘ডাক্তারকে কোনও দোষ দেব না। ওঁনারা চেষ্টা করেছেন। ওঁনারা বলেছিলেন যে কোনও সময় মারা যেতে পারে আমার স্ত্রী।’’