![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/IMG-20220117-WA0015.jpg)
শশাঙ্ক প্রধান: পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার নয়া গ্রামের ঘরে ঘরে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা।ডাক এসেছে দিল্লির, হাতে মাত্র ৯দিন। ফি বছরের মতই এবার নয়াদিল্লির রাজপথে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাধারণতন্ত্রের কুচকাওয়াজ। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও যেখানে উপস্থিত থাকবেন দেশ বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সেখানেই এবার আমন্ত্রিত হয়েছেন পিংলার পট শিল্পীরা। রাজধানী দিল্লির রাজপথে নিজেদের আঁকা পট আর পটের কাহিনী নিয়ে হাজির হতে চলেছেন তাঁরা। জানা গেছে পিংলার পটচিত্র শিল্পী বাহাদুর চিত্রকরের নেতৃত্বে ৩২ জন শিল্পী চলেছেন সেই বিখ্যাত কুচকাওয়াজে যোগ দিতে। তাই এখন তাঁরা চূড়ান্ত ব্যস্ত শেষ বেলার মহড়ায়।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/IMG-20220117-WA0011.jpg)
বাহাদুর চিত্রকর জানিয়েছেন, দেশের রাজধানীর রাজপথে বাংলার গৌরব গাঁথা শোনানোর আনন্দ তো আছেই তার সঙ্গে আরও একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে তা’হল একটি রেকর্ড সৃষ্টি করা পটচিত্র তৈরি করেছি আমরা যা কিনা ৩০০ ফুট লম্বা, ৬ ফুট চওড়া। এতবড় পটচিত্র এর আগে কোনও দিন তৈরি হয়নি। মোট ৭ দিন সময় লেগেছে এটি তৈরি করতে। এখানে আমরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম বৃত্তান্ত, বাংলার বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু থেকে তিতুমিরের বাঁশের কেল্লার লড়াই ইত্যাদি কাহিনী তুলে ধরেছি। আমাদের এখানকার শিল্পীরা এখন তাঁদের কাজ নিয়ে হামেশাই বিদেশে আমন্ত্রিত হন। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি আমরা কিন্তু দেশের রাজধানীতে এমন সুযোগ পাওয়া গর্বের। তাই শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। দিন রাত চলছে মহড়া।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/IMG-20220117-WA0016.jpg)
জানা গেছে গতবছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে জাতীয় গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সেখানেই তিনি নয়া গ্রামের ৮জন শিল্পীর কাছ থেকে ১২০ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট চওড়া পটচিত্র সম্বলিত নেতাজীর জীবনীমূলক গীতিকাহিনী শুনেছিলেন। শিল্পীদের সঙ্গে কথাও বলেন আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী। সম্ভবত সেই ভালোলাগা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে সাধারণতন্ত্র দিবসে ডাকা হয়েছে তাঁদের। প্রধানমন্ত্রীর মনে নয়ার শিল্পীরা কতটা দাগ কেটেছিলেন তা প্রমাণিত হয়েছিল তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেও। মন কি বাতের ৭৩ তম পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কথায় বাংলার হস্তশিল্প ও চারুশিল্প প্রসঙ্গে উঠে এসেছিল পিংলার পটচিত্র শিল্পীদের কথা।
মূলতঃ হিন্দু পুরান নির্ভর গীতিগাঁথা নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন নয়াগ্রামের এই পটশিল্পীরা। ৬ দশক আগে বন্যা কবলিত পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ও অন্যান্য জায়গা থেকে পিংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন এই শিল্পীদের পূর্বপুরুষ। নতুন বসতি তাই নাম হয় নয়া। সবচেয়ে বড় কথা এই যে এই শিল্পীরা সব্বাই প্রান্তিক কৃষিজীবী দরিদ্র মুসলিম পরিবার ভুক্ত হয়েও অসামান্য হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী বুনেছেন তাঁদের পটচিত্রে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/01/IMG-20220117-WA0004.jpg)
২০০১সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোড়া টাওয়ার সন্ত্রাসবাদী হামলায় ভেঙে পড়লে সারা বিশ্বের সাথে সেদিকে মুখ ফেরায় নয়ার শিল্পীরাও। সেই প্রথম নিজেদের পটে তাঁরা তুলে আনেন রাজনৈতিক সামাজিক পটভূমিকাও। বিশ্ববন্দিত হন তাঁরা।