নিজস্ব সংবাদদাতা: নজিরবিহীন ঘৃণ্য বর্বর ঘটনার সাক্ষী হল উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) মুজফ্ফর নগর। অভিযোগ, খাবারের সঙ্গে নেশার ওষুধ খাইয়ে দশম শ্রেণির ১৭ জন ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন স্কুলেরই দুই শিক্ষক ! ঘটনায় স্কুলের ২জন শিক্ষককে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্কুলের মধ্যে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা ভেবে পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। নভেম্বর মাসের ১৮তারিখ নাবালিকা ছাত্রীদের সাথে এমন ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনা জানাজানি হবার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে কারন এই ঘটনা জানার পরও প্রথম দিকে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করে গেছে বলে অভিযোগ।
জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে মুজফ্ফর নগর জেলার পুরকাজি এলাকার জিজিএস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে।ওই মেয়েদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার জন্য মেয়েদের ডাকা হয়েছিল স্কুলে। করোনা কালে সবার এক সাথে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলেই কয়েকটি ধাপে সারা দিন ব্যাপী পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এই পরীক্ষার জন্য ওই ১৭জন ছাত্রীকে রাত্রিবাস করার কথা বলা হয় এবং খাবার দেওয়া হয়। অভিযোগ সেই খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় নেশার ওষুধ বা মাদক। ছাত্রীরা অর্ধ অচেতন বা অচেতন হয়ে পড়লে তাঁদের শ্লীলতাহানি করা হয়।
অভিযোগ এই তথাকথিত প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময় কোনও মহিলা শিক্ষক উপস্থিত ছিলেননা। পরিবারগুলির অভিযোগ মেয়েদের কাছ থেকে এই ঘটনা জানার পরই তাঁরা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন কিন্তু পুলিশ বিষয়টি গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেনি। শুধু তাই নয় পুলিশ ওই শিক্ষকদের বাঁচানোর চেষ্টাও চালিয়ে গেছে।
ছাত্রীদের পরিবারের অভিযোগ বিষয়টি প্রথমে তাঁরা একটি স্থানীয় সাংবাদিককে জানান। ওই সাংবাদিক সামাজিক মাধ্যমে এই ঘৃণ্য বর্বরতাকে দিনের আলোয় আনার পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে স্থানীয় পুলিশ। পুলিশ কোনও খোঁজ খবর নেয়নি বিষয়টি নিয়ে, যোগাযোগ করেনি অভিভাবকদের সাথে উল্টে ওই সাংবাদিককে থানায় ডেকে প্রচন্ড চাপ তৈরি করে। সাংবাদিককে পুলিশ এই বলে হুমকি দেয় যে ওই দুই শিক্ষককে ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যে নিয়েই এই অপপ্রচার করা হচ্ছে। ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কথাও বলে পুলিশ।
ঘটনার পরের দিন সকালে তারা ওই ছাত্রীরা বাড়ি ফেরে। তার আগে ওই ছাত্রীদের এই বলে হুমকি দেওয়া হয় মুখ খুললে তাদের পরীক্ষাতো দেওয়াই হবেনা উল্টে পরিবারের সদস্যদের খুন করা হবে। CBSE বোর্ডের আওতায় চলা ওই নিগৃহীতারা সকলেই গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে জানা গেছে । শিক্ষকদের হুমকি পেয়ে ভয়ে এতদিন চুপ করেছিল ওই ছাত্রী ও তাদের পরিবার। তবে শেষ পর্যন্ত দুই ছাত্রীর পরিবার দ্বারস্থ হয় এলাকার বিধায়ক প্রমোদ আটওয়ালের। তিনিই পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অভিষেক যাদবকে বিষয়টি জানান। এরপরই দায়ের হয় এফআইআর।
ছাত্রীদের পরিবারগুলির দাবি, প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি পুলিশ। পরে বিধায়কের হস্তক্ষেপেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও অভিযোগ পাওয়ার পরও প্রথম দিকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।অভিযোগ, পুরকাজি থানার হাউস অফিসার বিনোদকুমার সিং গোটা বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হওয়ার পরই ওই দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিনোদকুমার সিংয়ের বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুজফ্ফর নগরের সিনিয়র পুলিশ সুপার অভিষেক যাদব জানিয়েছেন, ঘটনা জানার পরই ৫সদস্যের একটি টিম করা হয়েছে। এরই সাথে রয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশও। ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দোষি কাউকে রেহাই দেওয়া হবেনা।