নিজস্ব সংবাদদাতা: সময় দেয়না বাবা, ক্যাম্পাস না খোলায় দেখা হয়না বন্ধুদের সঙ্গেও। এই আক্ষেপ নিয়েই আত্মহত্যা করলেন আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur)য়ের এক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মৃত্যুর আগে দীর্ঘ ২ পাতার আত্মহত্যা লিপিতে (Suicide Note) ওই ছাত্র জানিয়ে গেছেন,’ আর চাপ নিতে পারছিলাম না, তাই চললাম।’ লিখে গেছেন, আমি জানি আমার মৃত্যুর পর আমার মা একলা হয়ে যাবে কিন্তু আমার কিছু করার নেই। মধ্যপ্রদেশ সরকারের অত্যন্ত উঁচু পদে কর্মরত ব্যস্ততম বাবার প্রতি তাঁর আক্ষেপ ‘বাবা যদি নিজের ভাই বোনদের মত আমাকেও একটু সময় দিতেন…..”
২০শে অক্টোবর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের ৭৮নম্বর এলাকার বিলাসবহুল বাড়ির ব্যালকনি থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৯বছরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই ছাত্র স্বার্থক বিজয়াবতের দেহ। স্থানীয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে গভীর অবসাদ থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই ছাত্রটি। আমরা একটি ২পাতার সুইসাইড নোট পেয়েছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি।’ ‘আই ক্যুইট’ বা আমি লড়াই ছেড়ে দিলাম লিখে ওই ছাত্রের আত্মহত্যার পেছনে ‘পারিবারিক নিঃসঙ্গতা ও পঠনপাঠনের অতৃপ্তি জনিত অবসাদ’কেই কারন বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িতে থেকেই ভার্চুয়াল ক্লাশে অংশ নিচ্ছিল স্বার্থক। স্বার্থকের বাবা জয়ন্ত বিজয়াবত নর্মদা ভ্যালি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অতিরিক্ত ডিরেক্টর। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর ব্যস্ততম পেশা। মা নিপাট গৃহবধূ একটি বোন রয়েছে। এক মর্মান্তিক আত্মহত্যা লিপিতে ওই যুবক লিখেছে, “ যে প্রত্যাশা নিয়ে JEE প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তা ভেঙে যাচ্ছে। কী ভেবেছিলাম আর কী হয়ে গেল। বন্ধুদের সাথে মজা করব ভেবেছিলাম কিন্তু অনলাইন ক্লাশে ফেঁসে গেলাম। আমার পরিবারও খুব মজার। বাবা জেদী, মা বাধ্য
আর বাতসল্যা (বোন) ছোট। কাকে কাকে সামলাবো? বাবা যদি আমাদের সঙ্গে একটু সময় কাটাতেন, যতটা নিজের ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলেন তার অর্ধেক আমাদের সাথে বলতেন তাহলেও এদিন দেখতে হতনা। মা, আমি জানি আমার যাওয়ার পর তুমি একা হয়ে যাবে কিন্তু আমার আর সহ্য হচ্ছিলনা।’
স্বার্থকের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছেছে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসেও। ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে আইআইটি খড়গপুরের রেজিস্টার তমাল নাথ বলেছেন, ‘অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই ঘটনা।’ আইআইটি ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে কী ভাবছে এর উত্তরে রেজিস্টার বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকারের নিয়ম ও কোভিড বিধি মেনেই আমরা ধাপে ধাপে এই বিষয়ে এগুচ্ছি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু কিছু পড়ুয়াকে ক্যাম্পাসে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।’ আইআইটি খড়গপুরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস খোলার সবটাই আমাদের হাতে নেই। সরকারের নিয়ম মেনেই কাজ করতে হচ্ছে। অতিমারীর অনিশ্চয়তার মাঝে তাড়াহুড়ো করার জায়গা নেই কারন এই ক্যাম্পাসে ১০হাজার পড়ুয়া থাকেন।
স্বার্থক তাঁর সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন আইআইটি ক্যাম্পাসে তিনি যে কদিন থাকতে পেয়েছিলেন সেই দিনগুলো তার কত খুব সুন্দর কেটেছিল। জানিয়েছেন বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ভালো মুহূর্তের কথাও।এদিকে দেশ জুড়ে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে যা রীতিমত উদ্বেগ জাগাচ্ছে। জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ থেকে ২০১৯য়ের মধ্যে ১৪ থেকে ১৮বছরের ২৪ হাজার পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছে। আর এই ঘটনার পেছনে অবসাদই সর্বাধিক কারন বলেই মনে করা হচ্ছে। যে কারনে পরিবারকে ওই স্তরের পড়ুয়াদের বেশি বেশি করে সময় দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সমাজবিদরা।