নিজস্ব সংবাদদাতা: বিজেপির আইটি সেল কিংবা গদি মিডিয়া যখনই কোনও ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে সাথে সাথেই তা প্রমাণ সহ মিথ্যা বলে হাজির করত ‘অল্ট নিউজ’ বা অল্টারনেটিভ নিউজ (Alt News)। ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট বা সত্য সন্ধান খবর পরিবেশক সেই ‘অল্ট নিউজ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেইরকে (Mohammad Zubair) গ্রেফতার করল দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জুবেইরকে। জুবেইরের সহকর্মী তথা সংস্থার আরেক সহযোগী সংগঠক প্রতীক সিনহা জানিয়েছেন, প্রতীককে কোনও অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সেই স্থানের নাম গোপন রাখছে। জানা গেছে চার বছর আগের একটি পোস্টের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে জুবেইর-কে।
প্রতীক জানিয়েছেন, ” ডাক্তারি পরীক্ষার পর জুবেইরকে কোনও অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। তাঁর আইনজীবী কিংবা আমাদের কাছে সেই স্থানের নাম গোপন রাখা হয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত আমরা ওই পুলিশ ভ্যানে ছিলাম। যে পুলিশরা জুবেইরকে নিয়ে গিয়েছে তাঁদের উর্দিতে কোনও নাম বা পদ লেখা ছিলনা।” জানা গেছে জুবেইরকে সোমবার পুলিশ ডেকে পাঠায় ২০২০ তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা পসকো আইনের মামলায়। ওই মামলায় জুবেইর হাইকোর্ট কর্তৃক আগাম জামিন পেয়েছিল। কিন্তু সে পুলিশের কাছে যাওয়ার পর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। দিল্লি পুলিশের মেধা তথ্য প্রযুক্তি শাখা, Intelligence Fusion & Strategic Operations (IFSO) division তাঁকে গ্রেফতার করেছে বলেই জানা গেছে। প্রতীক সিনহা অভিযোগ করেছেন, ” জুবেইর কে যে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে তার FIR কপি তাঁদেরকে সরবরাহ করেনি পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক সংবাদসংস্থা ANI কে জানিয়েছেন, সম্প্রতি একটি ট্যুইটে প্রকাশিত ছবিতে একটি হোটেলের সাইনবোর্ড কে ‘হনিমুন হোটেল’ কে ‘হনুমান হোটেল’ এ পরিবর্তিত করা হয়েছে। ছবি দুটির নীচে লেখা হয়েছে ২০১৪ সালের আগে ‘হনিমুন হোটেল’ ২০১৪ সালের পরে ‘হনুমান হোটেল’ হয়েছে। এই ট্যুইটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে জনৈক হনুমানভক্ত# বালাজিকিজৈন (Hanuman Bhakt @ balajikijaiin) ক্ষোভ প্রকাশ
করে ট্যুইট করেন যে এটি হিন্দুদের জন্য অপমানের কারন হনুমান ব্রহ্মচারী ছিলেন। দয়া করে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” এই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে জুবেইরকে কারন ওই পোস্টটি মহম্মদ জুবেইর নামে একজনের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকেই করা হয়েছিল।
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর জুবেইরের গ্রেফতারকে সত্যেকে হেনস্থা করা বলে বর্ননা করে বলেছেন, ” ভারতের কিছু সত্য সন্ধানী পরিষেবা বিশেষ করে অল্টনিউজ সত্য অতিরিক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিশেষ করে যেখানে ব্যাপকহারে বিকৃত তথ্য পরিবেশিত হয়। যেখানে মিথ্যার বেসাতি ছড়িয়ে অপরাধ সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়। জুবেইরকে গ্রেফতার আসলে সত্যকে হেনস্থা করা। তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া উচিৎ।”
জুবেইর কীভাবে মিথ্যার মুখোশ খুলেছিলেন তাঁর দু’একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। গেরুয়া শিবির থেকে একবার একটি ভিডিও বিকৃত করে প্রচার করা হয় যে নেপাল সফরে গিয়ে তিনি চীনের রাষ্ট্রদুতের সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন। জুবেইর প্রকাশিত আসল ভিডিওটি জানিয়ে দেয় ওই মহিলা চীনের রাষ্ট্রদূত নন, একজন নেপালী নাগরিক মাত্র।
পবন হংস বিমান সংস্থা নাকি ভারতীয় হিন্দু ছাত্রদের সঙ্গে ঘৃণাসূচক আচরণ করছে এমনই প্রচার করে বাজার গরম করার চেষ্টা করেছিল গদি মিডিয়া বলে পরিচিত সুদর্শন নিউজ। অল্ট নিউজ তা মিথ্যা বলে প্রমাণ করে দেয়। সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবকে ভোটে হারানোর লক্ষ্যে গৈরিক বাহিনী বাজারে একটি ভিডিও ছাড়ে যাতে বলা হয় ভিডিওতে যে সাধুটির চুল ধরে পুলিশ হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেই পুলিশ হল অখিলেশ যাদবের বাবা মুলায়ম সিং যাদবের রাজত্বকালের পুলিশ। জুবেইর প্রমান করে দিয়েছিলেন ভিডিওটি বিজেপি শাসিত গুজরাটের।
এই ভাবে আসামের হিংসার ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে চালিয়ে ধর্মীয় জিগির তোলা, বিরাট কোহলির পরিবারকে ধর্ষণের হুমকিকে পাকিস্তানের নাগরিক বলে চালানো ইত্যাদি ইত্যাদি বহু পরিকল্পিত মিথ্যা প্রচারকে নগ্ন করে দিয়েছেন জুবেইর। উগ্র হিন্দু মৌলবাদী নেতা যাতি নরসিংহানন্দ, মোহন্ত বজরঙ মুনি, আনন্দ স্বরূপরা বারংবার তোপ দেগেছেন জুবেইরকে লক্ষ্য করে। ২০১৯ সালে জুবেইরের লেখা হারপার কলিন্স ( Harper Collins)প্রকাশিত ইন্ডিয়া ‘মিশইনফর্মড : দ্য ট্রু স্টোরি'( “India Misinformed: The True Story”) গদি মিডিয়া ও বিজেপির আইটি সেলকে প্রায় নগ্ন করে দিয়েছে। জুবেইরকে কী তারই মূল্য দিতে হল?