নিজস্ব সংবাদদাতা: সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেল মোদি সরকার। সরকারের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে পেগসাস কান্ডের তদন্তের জন্য নিজেই কমিটি তৈরি করলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শুধু তাই নয় ইসরায়েলের তৈরি করা ফোনের ওপর নজরদারি করা এই সফটওয়্যারের প্রতিস্থাপন, পরিচালনা ইত্যাদি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে বারংবার তথ্য চাওয়া স্বত্ত্বেও সরকার যথেষ্ট তথ্য দেয়নি বলেই বুধবার মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। আদালত কেন্দ্রের তরফে তোলা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে আদালত বলেছে, ‘ জাতীয় নিরাপত্তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু বারংবার এই যুক্তি দেখিয়ে সরকারকে ফ্রিপাশ বা ছাড়পত্র দেওয়া যায়না।
পাশাপাশি এদিন ‘পেগাসাস’ সম্পর্কিত বিষয়ে তদন্তের জন্য কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গড়ার প্রস্তাব নাকচ করে আদালত নিজেই একটি তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করেছেন যার শীর্ষে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক আর.বি. রবীন্দ্রন। তাঁকে সহায়তা করবেন একজন আইপিএস পদাধিকারী এবং জাতীয় ফরেনসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদাধিকারী। আগামী ২মাসের মধ্যেই এই কমিটি মূল অভিযোগ ও সেই সংক্রান্ত বিষয় সম্বলিত একটি রিপোর্ট আদালতের কাছে রাখবে। যা নিয়েই পরবর্তী শুনানি হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন.ভি.রামানা জানিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য ইজরায়েলের প্রস্তুত এই পেগাসাস সফটওয়্যার দিয়ে সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজের যুক্ত ব্যক্তিদের ফোনে নজরদারির অভিযোগ নিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। ভারতেও এই একই ঘটনার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠার পরই কয়েকটি দেশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করলেও মোদি সরকার নীরব থাকে। সরকারের তরফে দাবি করা হয় তাঁদের পক্ষে এমন কোনও নজরদারি চালানো হয়নি। অন্যদিকে ইজরায়েল জানিয়ে দেয় সরকার বা সরকারি সংস্থা ছাড়া অন্য কাউকেই পেগাসাস সফটওয়্যার বিক্রি করেনা তারা। এরপরই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন একাধিক ব্যক্তি।
এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত তুলে সরকার বারবার সববল জায়গায় আইনি কর্তৃত্ব ফলাতে পারেনা কারন তা’হলে এর প্রতিক্রিয়া খারাপ হতে থাকবে। সরকারের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে আদালত বলেছে, এতে চলতি বিচারব্যবস্থার আস্থার ওপর আঘাত প্রতিপন্ন হবে। ১৯৮৪ সালের একটি রায়ের অংশ উল্লেখ করে বিচারপতি একটি পুনরক্তি করে বলেন, ‘আপনি যদি কিছু গোপন রাখতে চান তবে বুঝতে হবে আপনি আপনার কাছ থেকেই কিছু লুকোতে চাইছেন।’
আদালত বলেছেন, ‘বর্তমান দুনিয়ায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রুখতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হয়ত খর্ব হতে পারে। জাতীয় সুরক্ষায় নাহয় এটা করা যায় কিন্তু জাতীয় সুরক্ষার নামে সরকার বারবার এই ছাড়পত্র পেতে পারেনা। তাছাড়া জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টি আইনী ব্যবস্থার উর্ধ্বে নয়। আদালতকে জানাতে হবে কী সেই জাতীয় সুরক্ষা। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিয়ে আদালতকে সেই সুরক্ষার বিষয় জানাতে হবে। জাতীয় সুরক্ষার নামে আদালত নীরব হয়ে থাকতে পারেনা। এই বিষয়ে কেন্দ্রকে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে হবে নচেৎ আদালত নীরবদর্শকের ভূমিকা পালন করবেনা। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করবেনা ঠিকই কিন্তু তাবলে আদালত নিশ্চুপ হয়ে থাকবেনা।’
আদালতের এই রায়ে নিজেদের উচ্ছাস আড়াল করেননি সরকারের বিরোধিতা করা আইনজীবীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা, গোপনীয়তার ওপর আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। অজুহাত দেওয়া হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার কিন্তু কী সেই জাতীয় নিরাপত্তা তার ব্যাখ্যা নেই সরকারের কাছে। আমাদের সন্দেহের আঙুল এই সরকারের দিকেই। সরকার নিজস্ব কমিটি তৈরির নামে অভিযোগগুলি ধামাচাপা দেওয়ার অভিসন্ধি করছিল কিন্তু আদালত সেই অভিসন্ধি ব্যর্থ করে দিয়েছে।’