নিজস্ব সংবাদদাতা: শেষ অবধি আশঙ্কাই সত্য হল। ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ভেঙে (Army Helicopter Crash in Tamil Nadu)৷ নিহত হলেন চিফ অফ ডিফেসন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত (CDS Bipin Rawat) এবং তাঁর স্ত্রী মধুলিকা ছাড়াও ১১জন শীর্ষ সেনা আধিকারিকের। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার এল.এস লিডার, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হরজিন্দার সিং, উচ্চ পদাধিকারি গুরসেবক সিং, জিতেন্দ্র কুমার, ল্যাফটেনেন্ট নায়েক বিবেক কুমার, ল্যাফটেনেন্ট নায়েক বি সাই তেজা এবং হাবিলদার সৎপাল প্রমুখরা।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ১৪জনকে নিয়ে ভেঙে পড়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার IAF Mi-17V5. কয়েকঘন্টা উদ্ধার কার্য চালানোর পর একে একে উদ্ধার হয় ১৩টি দেহ। যার মধ্যে ৭জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছিল বলে দাবি করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় ১৩জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও জেনারেল বিপিন রাওয়াতের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। রাতের দিকে তাঁর মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
দুপুর ১১.৪৮ নাগাদ ভারতীয় বায়ুসেনার এই হেলিকপ্টারটি সুলুর বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ান ভরেছিল তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটন সামরিক কলেজ ঘাঁটিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে কিন্তু ১২.২২নাগাদ সেটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বায়ুসেনার। মনে করা হচ্ছে ওই সময় তামিলনাড়ুর নীলগিরি পাহাড়শ্রেণীর দুর্গম অরণ্যে ভেঙে পড়ে সেটি। জায়গাটি কুন্নু্রের কাছাকাছি এবং লক্ষ্য গন্তব্য থেকে মাত্র ১০কিলোমিটার দুরে অবস্থিত।
কিভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তার প্রকৃত কারন এখনও জানা যায়নি। ১৪ জনের মধ্যে ১মাত্র জীবিত ব্যক্তি হলেন গ্রূপ ক্যাপ্টেন বরুন সিং। ওয়েলিংটন সামরিক হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি সুস্থ হওয়ার পর সেটা জানা যেতে পারে। জানা গেছে বুধবার ভোরে দিল্লি থেকে বিমান যোগে সস্ত্রীক তামিলনাড়ুর সুলুরে এসে পৌঁছান জেনারেল রাওয়াত। সেখান থেকে ১১জন সেনা আধিকারিক সহ রওনা দেন ওয়েলিংটন সামরিক কলেজের উদ্দেশ্যে। ডিফেসন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের (DSCC) শিক্ষক ও পড়ুয়াদের অভিভাষন দেওয়ার জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খুবই কুয়াশাছন্ন ছিল আকাশ। সম্ভবতঃ সেই কারণে নিচু দিয়ে উড়ছিল হেলিকপ্টারটি। একটি উপত্যকায় ধাক্কা মেরে সেটি একটি গাছের মধ্যে দিয়ে জ্বলতে জ্বলতে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। দুই ব্যক্তিকে জ্বলন্ত অবস্থায় হেলিকপ্টার থেকে পড়ে যেতেও দেখা গিয়েছিল। হেলিকপ্টারটি চালাচ্ছিলেন উইং কমান্ডার পৃথ্বী সিং চৌহান। তিনি সহ তাঁর চার সঙ্গীও প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনায় তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে এই নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করার পর জেনারেল রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী এবং নিহত অন্যান্য সেনানায়কদের দেহাবশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ দিল্লিতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই দুর্ঘটনায় এক ঝাঁক সেনানায়কের মৃত্যুর ঘটনা শোকাহত করেছে গোটা দেশকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনায় গভীর দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, জেনারেল রাওয়াত ছিলেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও অসমসহসী সেনানায়ক। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উন্নতি ও আধুনিকীকরনে তাঁর অবদান চির অম্লান থাকবে। সামরিক রনকৌশলেও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু আমাকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে।
কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ রাহুল গান্ধী তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন, জেনারেল রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। এই অভাবনীয় দুঃখজনক ঘটনায়, এই কঠিন সময়ে আমরা তাঁর পরিবারের ভাবনার সঙ্গে সহমর্মি। অন্যান্য সেনা আধিকারিকদের মৃত্যুতেও আমি শোক প্রকাশ করছি। এই দুঃখের সময় গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে শোক প্রকাশ করছে।
উল্লেখ্য ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেসন্স স্টাফ ছিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত (CDS Bipin Rawat)। সেনাবাহিনীর তিনটি স্তম্ভ সামরিক , বিমান ও নৌবাহিনীর একজন কমান্ড ব্যবস্থার প্রবর্তন হয় নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালেই এবং সেনাবাহিনীর জেনারেল পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর সেই কমান্ড পদেই নিযুক্ত হন বিপিন রাওয়াত। ১লা জানুয়ারি ২০২০ থেকে নিজের অফিস অলঙ্কৃত করেছিলেন রাওয়াত। আর মাত্র ক’দিন পরেই সেই দায়িত্বের ২বছর পূর্তি হওয়ার ছিল কিন্তু তাঁর আগেই চলে গেলেন মাত্র ৬৩ বছর বয়সী সর্বাধিনায়ক।