নিজস্ব সংবাদদাতা: ভুল করেই বন্ধুর দিদিকে টেক্সট ম্যাসেজ করে আই লাভ ইউ লিখে ফেলেছিল তরুণ। বুঝতে পারার পর সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চেয়ে নেয় ওই তরুণ। তরুণের ওই ভুলকে নেহাতই ভুল মনে ক্ষমাও করে দিয়েছিলেন সেই যুবতী কিন্তু তাতেও রাগ পড়েনি যুবতীর দুই ভাইয়ের। গত কয়েকদিন ধরেই যুবতীর দুই ভাই যারা কিনা ওই তরুনের বন্ধু লাগাতার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। হুমকি ছিল হাত-পা ভেঙে দেওয়া থেকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ারও। সোমবার সেই তরুণকে বাড়ি থেকে ডেকে পাঠিয়ে ব্যাপক মারধর করা বলে অভিযোগ। অপমানে লজ্জায় এরপর সেই তরুণ বাড়ি ফিরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে জানা গেছে। সোমবার দুপুরে এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/02/Screenshot_20220207-185406_PicsArt.jpg)
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/02/Screenshot_20220207-185543_PicsArt.jpg)
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত তরুনের নাম মৃনাল পাত্র। ১৯ বছরের মৃনালের বাড়ি ঘাটাল পুরসভা এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দূরাভাষপল্লীতে। শহরেরই কুশপাতা এলাকার একটি সংস্থায় কাজ করতেন মৃনাল। সেই সংস্থায় কাজ করতেন সুরজ ও সুমন দাস নামে আরও দুই তরুণ। যারা সম্পর্কে দুই ভাই। কাজের সুবাদেই আলাপ ও বন্ধুত্ব হয় মৃনাল ও সুমন ও সুরজের। এরই মাঝে মৃনাল এক যুবতীকে টেক্সট ম্যাসেজ করে আই লাভ ইউ বলে। যুবতীটি সম্ভবতঃ সেই ম্যাসেজের কথা জানিয়েছিল ভাই সুমনকে। এরপরই সুমন প্রচন্ড বকাবকি করে এবং হুমকি দেয় হাত পা ভেঙে দেওয়ার। মৃনাল সাথে সাথে ম্যাসেজ করে ওই যুবতীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সে বলে, ‘আমি জানতামনা দিদি যে তুমি সুমনদার দিদি। আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ যুবতীও জানায় ‘ঠিক আছে রে আমি কিছু মনে করিনি।’ অভিযোগ এরপরেও সুমন হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। ভয়ে কাজে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিল তরুণ।
কিন্তু তারপরও হুমকি বহাল ছিল। মৃনাল ফের ওই যুবতীকে টেক্সট ম্যাসেজ করে, ‘ দিদি, সুমনদা আমাকে মারবে বলছে। আমার হাত পা ভেঙে দেবে বলছে। প্লিজ দিদি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমাকে বাঁচাও।’ যুবতী উত্তরে টেক্সট ম্যাসেজ করে জানান, ‘ঠিক আছে আমি সুমনকে বলে দিচ্ছি, তোকে কিছু করবেনা।’ এরপরই সোমবার ওই তরুণকে দরকার আছে বলে ফোন করে ডেকে পাঠায় সুমন। অভিযোগ সে আসার পরই তাকে বেধড়ক মারধর করে সুমন এবং সুরজ। এদিকে অনেকক্ষণ বাড়ি থেকে বেরিয়েও ছেলে আসছেনা দেখে ছুটে আসেন মৃনালের মা মীরা। মীরা জানিয়েছেন, ‘ ছেলে ত্রস্ত ভাব নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। অনেকক্ষন কেটে যাওয়ার পরও সে বাড়ি ফিরছেনা দেখে আমি ছুটে যাই ওর কাজের জায়গায়। কিন্তু ওখানে গিয়ে ছেলের দেখা পাইনি। ওকে ফোন করতে জানায়, ‘আমাকে ওরা প্রচুর মারধর করেছে। আমাকে মেরে ফেলবে বলেছে। আমি আর বাঁচবনা। এরপরই আমি বাড়ি ছুটে যাই। আর ওখানে গিয়েই দেখি ছেলে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে।’
মীরার চিৎকার চেঁচামেচিতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। নামানো হয় মৃনালের দেহ। নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পুলিশ জানিয়েছে সোমবার সন্ধ্যা অবধি কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। আপাততঃ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।