নিজস্ব সংবাদদাতা: শেষ অবধি গ্রেপ্তার করা হল খড়গপুর শহর বিজেপির উত্তর মন্ডলের সভাপতি দীপসোনা ঘোষকে। মেদিনীপুর সাংসদ তথা বিজেপির সর্বভারতীয় দীলিপ ঘনিষ্ঠ এই বিজেপি নেতাকে মঙ্গলবার সকালেই তাঁর সুভাষপল্লীর বাড়িতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই এক নেত্রী শ্লীলতাহানি ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে খড়গপুর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর বিজেপির অভ্যন্তরে। কারন অভিযুক্ত যেমন সাংসদ ঘনিষ্ঠ তেমনি অভিযোগকারিণী খড়গপুর শহর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট বলেই পরিচিতা।
উল্লেখ্য এমাসের গোড়াতেই খড়গপুর শহরে একটি কম্বল বিতরণ কর্মসূচিকে ঘিরে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল হিরন বনাম দীলিপ গোষ্ঠীর কর্মীরা। খড়গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি গেটে হিরণের (Hiran Chatterjee) কম্বল বিতরণ কর্মসূচি ছিল। অভিযোগ সেই কর্মসূচি বাতিল করার জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন খড়গপুর শহর বিজেপির উত্তর মণ্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষ। অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেত্রী তৃষা চাকলাদার অভিযোগ করেন, দীপসোনা তাঁকে ফোন করে হুমকি দিতে থাকেন যে কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে করা যাবে না। আর জোর করে অনুষ্ঠান করলে তার ফল ভাল হবে না। যদিও শেষ অবধি এই কর্মসূচি হয় এবং তাতে উপস্থিত ছিলেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
গন্ডগোলের সূত্রপাত হয় কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান করে হিরণ বেরিয়ে যাওয়ার পর। তৃষা চাকলাদারের অভিযোগ, বিধায়ক বেরিয়ে যাওয়ার পরই দীপসোনা, কুণাল সরকার নামে বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সেখানে যায়। বিজেপি নেত্রী তৃষা, তাঁর দাদা কুন্তল চাকলাদার, অঙ্কিত শর্মা, অভিজিৎ ভুঁইয়ার উপর হামলা চালানো হয়। দীপসোনা রীতিমতো চপার হাতে হামলা চালায় বলেই অভিযোগ। দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাতেই শহর পুলিশের কাছে দীপসোনা, কুণাল-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে খড়গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৃষা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হল দীপসোনা ঘোষকে।
নিজের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে দীপসোনা ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ পিকে এবং তৃনমূলের চক্রান্তে ভারতীয় জনতা পার্টিকে হেয় করার একটা চেষ্টা চলছে। চলছে দীলিপ ঘোষ ও হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়কে বদনাম করার। এই ঘটনা তারই প্রতিফলন।’ যদিও এটাই একমাত্র সত্যি ঘটনা নয় কারন ২রা ডিসেম্বরের সেই ঘটনার পরই খড়গপুর শহর ছেয়ে গিয়েছিল দীলিপ ঘোষ সর্ব ভারতীয় সভাপতি নির্বাচনের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেস্টুন আর ব্যানারে। আর সেই পোস্টারে দীলিপ ঘোষের সাথে সমস্ত নেতার ছবি থাকলেও বাদ গিয়েছিল বিধায়ক হিরন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। সব মিলিয়ে পুরভোটের আগে খড়গপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কারা কারা টিকিট পাবেন সেই নিয়ে একটি সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে বিজেপির মধ্যে এমনটাই দাবি করা হয়েছে দলেরই অন্দরমহল থেকে। লড়াইয়ের সেই চোরা স্রোতেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।