নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র ৮ মাসে ভারতে নারী নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ যা কিনা বছর গড়ালে ৫০% ছুঁয়ে যেতে পারে যদি হার একই থাকে। সম্প্রতি দেশের জাতীয় মহিলা কমিশন বা National Commission for Women (NCW) একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে যা থেকে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই তথ্য বলছে ২০২০ সালে যেখানে কমিশনের কাছে ১৩ হাজার ৬১৮টি অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেখানে এবার প্রথম ৮ মাসেই অভিযোগ জমা পড়েছে ১৯ হাজার ৯৫৩টি। যা কিনা ৪৬% বেশি।
সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় স্তরের
সংবাদমাধ্যমে কমিশনের সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে জমা পড়েছে ১০ হাজার ৮৪টি। প্রসঙ্গত, গত বছরই জানা গিয়েছিল আগের চার বছরের হিসেবে নারীঘটিত অপরাধ ৬৬ শতাংশ বেড়েছে এই রাজ্যে। দিল্লি থেকে জমা পড়েছে ২ হাজার ১৪৭টি অভিযোগ। তালিকায় এরপর রয়েছে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র। যথাক্রমে ৯৯৫ ও ৯৭৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে ওই দুই রাজ্য থেকে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে অভিযোগের সিংহভাগই এসেছে উত্তরপ্রদেশ থেকে। বলা হচ্ছে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই নারী নির্যাতনের অভিযোগে শীর্ষে সেই যোগীরাজ্যই। যার পরেই রয়েছে রাজধানী দিল্লি।
সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে সবথেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে এবছরের জুলাই মাসে। জুলাইতে মোট ৩ হাজার ২৪৮টি কপি জমা পড়েছে। বলা হচ্ছে ২০১৫ সালের জুন মাসের আর কোনও বারই এক মাসে এরকম অভিযোগ দায়ের হয়নি। টানা ৭২ মাসের পর এই রকম সর্বোচ্চ অভিযোগ জমা পড়ল জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে। মহিলাদের ওপর নির্যাতনের এই শ্রেণী বিভাজন করতে গিয়ে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে সর্বাধিক নারী নির্যাতিতা হয়েছেন পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে। অর্থাৎ যেখানে পুরুষ বা পরিবার মনে করেছে অভিযোগকারিণী তাঁদের পারিবারিক সম্মান নষ্ট করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের নির্যাতন হয়ে থাকে পরিবারের কন্যা তথাকথিত নিচু জাত, কম অর্থবান কিংবা ভিন ধর্মে প্রেম করে থাকলে।
কমিশনের তথ্য জানাচ্ছে, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে মহিলা নির্যাতনের ৭ হাজার ৩৬টি অভিযোগ পড়েছে। গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ জমা পড়েছে ৪ হাজার ২৮৯টি। এরপরই বিবাহিত মহিলাকে হেনস্তার অভিযোগ ২ হাজার ৯২৩টি। ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ যথাক্রমে ১ হাজার ২২টি ও ১ হাজার ১১৬টি। কেন বাড়ল নারী নির্যাতনের অভিযোগের সংখ্যা? মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা জানাচ্ছেন, এর পিছনে রয়েছে কমিশনের সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রভাব।তাঁর দাবি, কমিশন একটানা প্রচার চালিয়ে যাওয়ার ফলে মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন।আর সেই কারণেই অভিযোগ জমা পড়ার সংখ্যা এত দ্রুত বেড়েছে।তাঁর কথায়, ”কমিশন মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে নতুন নতুন পদক্ষেপ করছে। সেই সঙ্গে আমরা সারাক্ষণের হেল্পলাইনও চালু করেছি।”
যদিও এই যুক্তি কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একদল সমাজবিজ্ঞানী দাবি করেছেন বহু রাজ্যে দলিত মহিলাদের ওপর যৌন নির্যাতন বেড়েই চলেছে। উচ্চবর্ণের দাপটে পুলিশ সেই সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে অধিকাংশ জায়গায় নিস্পৃহ থাকায় এই ধরনের ঘটনা বেড়েই চলছে। পাশাপাশি ‘লাভ জিহাদ’ ইত্যাদি প্রচার জোরদার করায় পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে মহিলাদের ওপর নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে।