নিজস্ব সংবাদদাতা: বন্যা বিপর্যয়ের মধ্যেই গত ২৪ঘন্টায় বাংলা জুড়ে দুই নাবালক সহ মোট ৬জনের মৃত্যু হল বিদ্যুৎ ছোবলে। মৃতদের মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন। একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে বাড়ির ভেতরে জমা জলে দাঁড়িয়ে মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন বাড়ির কর্তা। তারপর তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে একে একে মৃত্যু হয় স্ত্রী এবং নাবালক সন্তানের। মঙ্গলবার বিকালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকালে উত্তর ২৪পরগনারই খড়দহ এলাকায়।
ঘটনাটি ঘটেছে একটি সরকারি আবাসনের ভেতর। জানা গেছে খড়দহ থানার অন্তর্গত পাতুলিয়ার সরকারি আবাসনের বাসিন্দা রাজা দাস (৩৫)। টানা বৃষ্টিতে তাঁর বাড়িতে জল ঢুকেছে। সেই জল এখনও বেরয়নি। এদিন সেই জলে দাঁড়িয়েই সুইচবোর্ডের প্ল্যাগে মোবাইল চার্জার লাগাচ্ছিলন তিনি। সেই সময়ই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। তাঁকে ওই পরিস্থিতিতে দেখে বাঁচাতে ছুটে আসেন তাঁর স্ত্রী পৌলমী (২৯)। তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। বাবা-মাকে দেখে ছুটে যায় তাঁদের ১০ বছরের ছেলে। সেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। কারও কারও মতে অবশ্য জমা জলে দাঁড়িয়ে ফ্রিজের প্ল্যাগ লাগাতে গিয়ে এই বিপত্তি।
বাবা-মা-দাদাকে ওই অবস্থায় দেথে ভিতরের ঘর থেকে চিৎকার করতে শুরু করে তাঁদের ছোট ছেলে। তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁরাই তিনজনকে উদ্ধার করে ব্যারাকপুর বি এন বোস মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করে। পরিবারে বেঁচে রয়েছে কেবলমাত্র ওই দম্পত্তির ৪বছরের শিশুটি। প্রাথমিকভাবে অনুমান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বিকালে বিদ্যুৎ বাহিত তারের সংস্পর্ষে এসে প্রথম দুটি মৃত্যুর খবর এসেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানার ইটাবেড়িয়া থেকে। একটি ত্রাণকার্য পরিচালনা করার শেষে স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানকে নিজ বাড়িতে ছেড়ে ফেরার পথে জলস্তরের সামান্য উঁচুতে থাকা বিদ্যুতের সংস্পর্ষে চলে আসে ভুটভুটিটি। ভুটভুটিতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ব্যক্তি তেঘড়ি গ্রামের সৌরভ মন্ডল ও বাগদীবাদ গ্রামের প্রদীপ মাইতি উচ্চপরিবাহী বিদ্যুৎ তারের সংস্পর্ষে চলে আসায় দুজনই ছিটকে জলের স্রোতে পড়ে ভেসে যান। একজনের দেহ তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করা হলেও অন্যজনের দেহ উদ্ধার হয় আরও অনেক পরে।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪পরগনার টিটাগড়ে। জানা গেছে টিটাগড় থানার মোহনপুর উত্তরপাড়ার ওই মৃত কিশোরের নাম হীরালাল রায় (১৫)। সে শিউলি গোসাইপাড়ার বাসিন্দা। শান্তিনগর হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী জানা যায় যে ওই কিশোর তার দিদিকে কোচিংয়ে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে সেই রাস্তায়। সেই রাস্তাতেই জলের উপর বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছিল। রাস্তায় জমা জলে পা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় ওই ছাত্র। সঙ্গে সঙ্গে ওখানেই পড়ে যায় সে। কিছু পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা বিষয়টি অনুমান করে ওই তারের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে কিশোরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাকে।
সোমবার বিকাল থেকে শুরু করে মঙ্গলবার বিকালের মধ্যেই ঘটে যাওয়া এই একের পর এক মৃত্যু বন্যার আবহের মধ্যেই ত্রাসের সঞ্চার করেছে। একের পর এক ভেসে যাওয়া গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোথায় কোন জলের মধ্যে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার কে জানে? ঘটনাগুলিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একের পর এক জমা জলে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন নবান্ন।