নিজস্ব সংবাদদাতা: মাস খানেক আগেই পুলিশ জানিয়ে দিয়েছিল জাতীয় সড়ক আর ব্যস্ততম সড়কে বাইক চালকের সাথে বাইক আরোহীরও হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়েছিল হেলমেট হীন চালকের পাশাপাশি আরোহীরও হেলমেট না থাকলে পুলিশ ধরবে এবং মোটর ভেইকেল আইনে মামলা রুজু করবে। বাস্তবে তা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে জানা নেই কিন্তু এখনও হেলমেটহীন চালকেরই দাপাদাপি আর আরোহী তো দুরের কথা। যদিও শুক্রবার রাতে খড়গপুর শহরের একটি দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিল কিভাবে হেলমেট থাকার জন্য গুরুতর আহত হয়েও বেঁচে গেলেন চালক আর পেছনে বসা আরোহী ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন স্রেফ হেলমেট না থাকার জন্যই।
শুক্রবার ছিল খড়গপুরের বিশেষ দেওয়ালি। শহরের অবাঙালি অংশ এই দিনটাকেই আনন্দ অতিশয্যের জন্য বেছে নেন। আলোর উৎসবের মধ্যেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল রাত সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দা আর চৌরঙ্গী মোড়ের মধ্যবর্তী রাস্তায়, বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রবেশদ্বারের একটু আগে বাবা হোন্ডা শো-রুমের কাছাকাছি। ওই সময় রাস্তার ওপরে পড়ে থাকা দুই আহত ব্যক্তিকে দেখেই পুলিশে ফোন করেন পথচারীরা।পুলিশ এসে ২জনকেই উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় বাইকের পেছনে থাকা ব্যক্তির আগেই মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চালক অশোক বেঁচে গিয়েছেন বটে কিন্তু গুরুতর আহত হয়েছেন তার পায়ের মালাইচাকি উল্টে গিয়েছে। বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে দুর্ঘটনায় নিহত ওই ব্যক্তির নাম সোনু সিং। বছর পঁয়তাল্লিশের সোনুর বাড়ি খড়গপুর শহরের কৌশল্যা কালী মন্দির সংলগ্ন। অন্যদিকে আহত বাইক চালক অশোক ওরফে কালু বলেই পরিচিত। দুজনেই এক কেবল অপারেটরের অধীনে ইন্টারনেট পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিল। শহরের বিস্তৃত এলাকায় তাঁদের ঘুরে বেড়াতে হত ইন্টারনেট পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখার জন্য। শুক্রবার রাতে এমনই একটি কাজ করে দুই বন্ধু মিলে চৌরঙ্গী থেকে শহরে ফিরে আসছিল তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটে জানা যায়নি কারন সেই সময় কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান পাওয়া যায়নি। কেউ বলেছেন অত্যধিক গতিতে থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিজেরাই পড়ে গেছিলেন। কেউ দাবি করেছেন কোনো যান ধাক্কা মেরে চলে গেছে।
জানা গিয়েছে নিহত সোনুর পুরো শরীরই অক্ষত ছিল। তার শরীরের কোথাও তেমন আঘাতের চিহ্ন ছিলনা। প্রাথমিক অনুমান শুধুমাত্র মাথায় আঘাত লেগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। হেলমেট পরা থাকলে এ মৃত্যু এড়ানো যেত বলেই পুলিশের তরফে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে সোনুর স্ত্রী ছাড়াও একটি নাবালক সন্তান রয়েছে। তাঁর দাদারা কাছাকাছি বসবাস করেন। শনিবার সবাই মিলেই ভাই ফোঁটা নেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল পরিবারের তরফে কিন্তু সব শেষ হয়ে গোটা পরিবার এখন অপেক্ষা করছে মর্গ থেকে তাঁর মৃতদেহ ফেরার জন্য। ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক