নিজস্ব সংবাদদাতা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর পরই রামপুরহাটের বগটুই গণহত্যাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI ফরেনসিক দল। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। কার্যত: এই টিম পাঠানোর মধ্য দিয়েই বগটুই গণহত্যা কান্ড নিয়ে নিজেদের তদন্তের কাজ শুরু করে দিল CBI। শুক্রবারই রাজ্য সরকারের SIT বাতিল করে বগটুই গণহত্যায় CBI তদন্তের আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই CBI আজই SIT তদন্তকারীদলটির সাথে দেখা গণহত্যা সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র নেওয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদেরও নিজের হেফাজতে নিতে পারে। অন্যদিকে নিজেদের ফরেনসিক দল পাঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিল CBI.
প্রশ্ন উঠছে ওই ফরেনসিক দলটি কী কী ধরনের নমুনা সংগ্ৰহ করে CBI কে সাহায্য করবে? এই ফরেনসিক দলের প্রথম কাজটিই হবে কতজন মারা গেছে তা সুনিশ্চিত করা। মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনও যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। দমকল বলেছিল তারা ১০টি দেহ উদ্ধার করেছিল অথচ পুলিশ বলছে মৃতের সংখ্যা ৮ জন। ওদিকে মৃতের পরিবার পিছু ১জন করে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ১০জনকে চাকরি দেওয়া হবে। ফলে তাঁর ঘোষনাতেও ধন্দ। এলাকার মানুষের দাবি মৃত্যু হয়েছে ১২জনের। এই ধন্দ কাটাতে আগেই মৃতের সংখ্যা নিরুপন করা জরুরি।
দ্বিতীয়ত: যে বিষয়টা ফরেনসিক দল জানতে চাইবে তা হল মৃত্যুর ধরন বা হত্যার ধরন। নিহতদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে নাকি আগে খুন করে বা আহত করে তারপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই রাজ্য ফরেনসিক দল SIT কে দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্টে বলেছিল একটি পোড়াবাড়ি যেখান থেকে একাধিক দেহ উদ্ধার হয়েছিল তার মেঝেতে পোড়া রক্ত মিলেছে। অর্থাৎ কোনও কোনও মৃতদেহ থেকে আগেই রক্তপাত হয়ে মাটিতে মেঝেতে পড়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, কয়েকজন কুপিয়ে আহত করার পর তাদের গায়ে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। CBI ফরেনসিক দল এই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায়।
তৃতীয়ত: CBI ফরেনসিক দলকে মৃতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। সোমবার রাতের ওই বীভৎস ঘটনার পর মঙ্গলবার মৃতদের ময়নাতদন্তের পর ওইদিনই দেহ গুলি কবরস্থ করা হয়। তার আগে সনাক্ত করা হয় দেহগুলি কিন্তু এই সনাক্তকরন পদ্ধতির মধ্যেও প্রচুর অনিয়ম, এমনকি বেআইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। মৃতদেহগুলি যেভাবে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে যে তা খালি চোখে সনাক্ত করা যায় কী? তা ছাড়া যিনি সনাক্ত করেছেন তাঁর সেই অধিকার আছে কী, প্রশ্ন উঠেছে তাই নিয়েও। ফলে ফের নতুন করে মৃতদেহ কবর থেকে তুলে দেহগুলির ডি.এন.এ সংগ্ৰহ করতে হতে পারে।
চতুর্থথ: হাইকোর্ট SIT এর তদন্তে স্পষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করে কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছেন যেখানে বলা হয়েছে, ২২ তারিখ সিট গঠিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তদন্তে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি SIT। যতটা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা উচিত ছিল, তা হয়নি। SIT আর তদন্ত করতে পারবে না। শুধু কাগজপত্রই নয়, ধৃত ও অভিযুক্তদের সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে হবে। অভিযোগ আছে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার। CBI-কে সহযোগিতা করতে হবে। দ্রুত ধরতে হবে দোষীদের। এই ভয়াবহ ঘটনা সমাজের বিবেকের উপর আঘাত। সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়োজন আছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থেই তদন্তভার সিবিআই হাতে তুলে দেওয়া হল। এখন CBI এর প্রধান দায়িত্ব হল উচ্চ আদালতের এই প্রশ্নগুলির নিষ্পত্তি করা আর সেটা করার জন্যই CBI কে পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়াই হবে ফরেনসিক দলের কাজ।